ফারজানা চৌধুরীঃ বুধবার রাত পৌনে ১০টা। নিজের বাসা থেকে ফেসবুক লাইভে আসেন ব্যবসায়ী মহসিন খান। এই লাইভের ১৬ মিনিটের দিকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। এরপর আত্মহত্যার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ফেসবুক লাইভে আবু মহসিন খানের আত্মহত্যার ঘটনা শুধু বাংলাদেশের মানুষকে নয় বিশ্বের সকল মানুষকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। কেউ কেউ লাইভে আত্মহত্যার সেই দৃশ্য দেখে হতবাক এবং বিচলিত হয়েছেন। অনেকে কেঁদেছেন। রাতভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটাই ছিল প্রধান খবর।
মহসিন খান যেভাবে আত্মহত্যা করেছেন এমন ঘটনা এর আগে দেখাতো দুরের কথা শোনাও যায়নি। এ কারণে ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশি। মহসীন খানের স্ত্রী এবং প্রকৌশলী ছেলে থাকেন অস্ট্রেলিয়া। মেয়ে জনপ্রিয় মডেল মুশফিকা তিনা থাকেন নায়ক স্বামী রিয়াজের সঙ্গে।
আত্মহত্যার আগে ফেসবুক লাইভে এসে বার্ধক্যের নিঃসঙ্গতা নিয়ে কথা বলেন মহসীন খান। সাম্প্রতিককালে নিকট আত্মীয়দের মৃত্যুর ঘটনার কথা উল্লেখ করে মহসীন খান বলেন,
“আমি ক্যান্সার আক্রান্ত। আমার ব্যবসা এখন বন্ধ। আমি বাসায় একাই থাকি। আমার এক ছেলে থাকে অস্ট্রেলিয়ায়। আমার ভয় করে যে আমি বাসায় মরে পড়ে থাকলে, লাশ পঁচে গেলেও কেউ হয়তো খবর পাবে না। পিতামাতা যা উপার্জন করে তার সিংহভাগ সন্তানদের পেছনে খরচ করি। প্রকৃত বাবারা না খেয়েও সন্তানদের খাওয়ানোর চেষ্টা করে, ফ্যামেলিকে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ফ্যামেলি অনেক সময় বুঝতে চায় না। নিজেকে আর মানিয়ে নিতে পারলাম না। আমি চলে যাবো। আত্মীয় স্বজন যারা আছো, যেহেতু বাবাও আমাকে জায়গাটা দেয়নি, আমি যে কবরস্থানটা করেছি সেখানে আমাকে দাফন করো না। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে একটি কবরস্থান হয়েছে, সেখানে তোমরা আমাকে দাফন করে দিও। ওটাই আমার জন্য ভালো হবে। কারণ প্রত্যেকটা লোক আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে- আমার বাবা-মা, ভাইরা, প্রত্যেকটা লোক। আমি যেটা দিয়ে সুইসাইড করার চিন্তা করছি, সেটি অবৈধ কোনো কিছু না। এই হলো আমার পিস্তলের লাইসেন্স। এক বছরের রিনিউ করা আছে। যারা দেখছেন তাদের সাথে এটাই শেষ দেখা সবাই ভালো থাকবেন।”
এরপরই নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেন মহসীন। এর আগে দরজায় সাদা কাগজে লিখেন ‘মামা দরজা খোলা, হাতলের হ্যান্ডেল চাপ দিয়ে ভেতরে ঢুক।’ লাইভে কথা বলার সময় আবু মহসিন খাঁনের সামনে টেবিল ছিল। ওই টেবিলে কাফনের কাপড় ছিল। এর ওপর একটি চিরকুট ছিল; তাতে লেখা আছে, ‘এখানে কাফনের কাপড় রাখা আছে। যা আমি ওমরা হজ্বে ব্যবহার করেছিলাম।’