কবিঃ বজলুর রশীদ চৌধুরী
বাল্যকালের অতীত দিনে ভেসে বেড়ায় মন,
পাড়ায় পাড়ায় দৌড়-ঝাঁপ, খেলতাম সারাক্ষণ।
মায়ে খেদানো বাপে তাড়ানো নিত্যদিনের বিষয়,
শাসন ভাষন যতই চলুক, খেলতে আমার হয়।
পাঁচের উপর বয়স আমার কবে হয়ে গেল,
বর্ণমালার একটি বর্ণ মুখে নাই এল।
এমন দিনে আদর করে মা বলেন ডেকে,
বড় বিদ্যান হবি খোকা, লেখাপড়া শিখে।
যাদু আমার মাণিক আমার আয় সাথে আয়,
পাঠশালাতে যাবি তুই, ঐ যে দুরের গাঁয়।
হেঁটে হেঁটে যাবি বাপ, আমি থাকবো চেয়ে,
সঙ্গে আরো কত আছে, যাবে তোকে নিয়ে।
বড় চিন্তা ঢুকে গেল কচি মাথার ভিতর,
স্কুল কেমন মাস্টার কেমন, কে জানাবে খবর।
পরদিন সকাল বেলা মাকে সাথে করে,
রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকি, অজানা এক ডরে।
আঁকাবাঁকা রাস্তা এই, গেছে অনেক দূর,
ক্ষেতের ফসল কাটছে চাষী, কণ্ঠে তুলে সুর।
কত মানুষ আসে যায় এই পথ ধরে,
তাদের পিছে আমিও যাচ্ছি, পাঠশালার তরে।
এমন সময় রহিম উদ্দিন পিছন থেকে ডাকে,
আমরা যাচ্ছি পাঠশালা, সঙ্গে নেব তোকে।
দূরের গাঁয়ে চেয়ে দেখি লাল টিনের ঘর,
এটিই আমার পাঠশালা, বাল্য শিক্ষার বর।
প্রথম মানের ছাত্র আমি, সঙ্গে আরো কত,
স্বরে ‘অ’ স্বরে ‘আ’ পড়ি অবিরত।
ছুটি হলে খুশী মনে বাড়ী ফিরে আসি,
পথের পাশে মা দাঁড়িয়ে মুখে মিষ্টি হাসি।
তেঁতুল বিচি ধুলো মাটি সঙ্গে নেওয়া চাই,
তা না হলে কঠিন শাস্তি, দিবেন গুরুমশাই।
বর্ণলিখে সংখ্যা শিখে, আঙ্গিনাতে চলি,
ছুটির পূর্বে শতকিয়া মুখে মুখে বলি।
ধূলির উপর যত লেখা, বানান আসল খুঁটি,
শেষ বছরের পরীক্ষায় দ্বিতীয় মানে উঠি।
খাগার কলম হরিতকি বনলতার রস,
এসব দিয়ে কলাপাতায় লিখি খস খস।
যোগ-বিয়োগ-পূরণ-ভাগ পাঠশালার পড়া,
শুভঙ্করের ফাঁকি আছে, সঙ্গেঁ গন্ডা কড়া।
নামতা-অংক শিক্ষা-শ্রুত লিপির পাঠ,
হরহামেশার সবক এটি, যেন বিদ্যার মাঠ।
ছোট্ট কুঠির পাঠশালা মোর, বিদ্যাপিঠের গুরু
এখানে মোর বাল্য কৈশোর, লেখা পড়ার শুরু।
গাঁয়ের আরো কত ছেলে, এক সাথে যাই,
সুযোগ মত পিয়ারা লিচু চুরি করে খাই।
বরই গাছের পাতি ডালে কত বরই পাঁকা,
কচি মুখে লালা ঝরে, ধৈর্য যায়না রাখা।
কত সাথী ফেল করে, কত যায় ছেড়ে,
পাঠশালাতে আসে না আর, পড়ার যুদ্ধে হেরে।
ফেলে আসা দিনগুলি বারে বারে উঠে,
রেখে যাওয়া স্মৃতি ভাসে, আমার মনের তটে।
সাথী আসে সাথী যায় বিরহের জ্বালা,
পাশ দিয়ে রেখে এলাম, আমা-র পাঠশালা।