ফরজ ওয়াজিব আমলগুলো যথাযথ আদায় করা বান্দার জন্য বাধ্যতামূলক। এসব আমল ত্যাগ করলে কঠিন গুনাহ হবে। আর নফল ইবাদত না করলে গুনাহ নেই; কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নফল আমলে যে যত এগিয়ে থাকবেন, তিনি আল্লাহর কাছে ততটাই মর্যাদার অধিকারী হবেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে।এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই (রূপক অর্থে), যা দিয়ে সে শোনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাহলে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দিই। আমি কোনো কাজ করতে চাইলে তা করতে কোনো দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। (সহিহ বুখারি: ৬৫০২) তাছাড়া কেয়ামতের দিন নফল ইবাদতের সওয়াব বেশি দরকার হবে। যেদিন ফরজ ইবাদতের ত্রুটির কারণে বান্দা আল্লাহর কাঠগড়ায় আটকা পড়বে সেদিন তার নফল ইবাদতগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে, তা হলো নামাজ। নামাজ সঠিক হলে সে সফল হলো। আর নামাজ সঠিক না হলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হলো। যদি তার ফরজে কিছু ত্রুটি থেকে যায়, তখন আল্লাহ বলবেন- দেখো, আমার বান্দার কোনো নফল আমল আছে কি না, যার দ্বারা ফরজে হয়ে যাওয়া ত্রুটি পূরণ হবে। অতঃপর তার বাকি সব আমল এমনই হবে।’ (তিরমিজি: ৪১৩)
নফল ইবাদতের মধ্যে ইশরাক ও দুহার নামাজ, আওয়াবিন নামাজ, তাহিয়্যাতুল মসজিদ, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি খুবই ফজিলতপূর্ণ আমল। এছাড়াও যত বেশি সম্ভব নফল নামাজ পড়া, নফল রোজা রাখা, রোগীকে দেখতে যাওয়া এবং সেবা করা, জিকির করা, দরুদ শরিফ পড়া, কোরআন শিক্ষা দেওয়া, কোরআন তেলাওয়াত করা, কবর জিয়ারত করা, মাসনুন দোয়াগুলো পড়া, দান-সদকা করা, সালামের প্রচার-প্রসার করা, মেসওয়াক করা, যেকোনো কাজে নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা, সর্বদা অজু অবস্থায় থাকা, এমনকি একজন মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলাও নফল ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। এসব ইবাদতের সওয়াব যেমন রয়েছে, তেমনি আল্লাহর নিকটভাজনে পরিণত হওয়ার মাধ্যম। অনেকে মনে করেন নফল মানে অতিরিক্ত ইবাদত। না করলেও সমস্যা নেই। শুধু এই বুঝটা নিয়েই মানুষ নফল থেকে গাফেল থাকেন। কিন্তু বাস্তবে নফল ইবাদত অতিরিক্ত কোনো বিষয় নয়; বরং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। কারণ, ফরজ ওয়াজিব আদায় করতে হয় আল্লাহর নির্দেশ পালনের স্বার্থে। কিন্তু নফল ইবাদত করা হয় শুধুই তাঁকে ভালোবেসে এবং তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফরজ-ওয়াজিবের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। মহান রবের নৈকট্যলাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।