নিজস্ব ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম শহর হলো মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হ্যামট্রামেক, যেখানে সকল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি মুসলিম। মার্কিনীদের ইতিহাসেই যা আগে কখনও ঘটেনি। সিটির মেয়র থেকে নির্বাচিত সকল জনপ্রতিনিধিই মুসলিম। মাত্র দুই বর্গমাইলের ছোট্ট একটি সিটি হ্যামট্রামেক। মিশিগানের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় এই সিটি ডেট্রয়েট সিটির সীমারেখার মাঝে অবস্থিত।
হ্যামট্রামেক সিটির নবনির্বাচিত মুসলিম মেয়র আমির গালীবসহ ৩ জন কাউন্সিলম্যান রবিবার (২ জানুয়ারী) আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন। হ্যামট্রামেক হাই স্কুল কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সিটির সব সম্প্রদায়ের শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন ডিয়ারবর্ন সিটির একজন ইয়েমেনি-আমেরিকান শিল্পী মারিয়া সাদ।
বাংলাদেশী শিল্পী অনামিকা রায়, বিল মায়ার, অগাস্টাস উইলিয়ামসন ও গান পরিবেশন করেন।৪ টি ধাপে এসব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। ৩১ তম জেলা আদালতের বিচারক অ্যালেক্সিস ক্রোট নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
৩ জন নবনির্বাচিত কাউন্সিলর সদস্য খলিল রেফাই, আমান্ডা জ্যাকস্কি, এবং অ্যাডাম আলবারমাকির সাথে নবনির্বাচিত মেয়র আমির গালীব শপথ নেন।
অতিথিদের স্বাগত জানান, হ্যামট্রামেক সিটি ম্যানেজার ক্যাথলিন অ্যাঙ্গেরার। বিদায়ী মেয়র ক্যারন ম্যাজেস্কি সকল নেতাদের সাথে তাদের পরিচয় করে দেন।
শপথ গ্রহন করার পর মেয়র আমির গালীব সিটির সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। একইসঙ্গে সব দল মত সকল মানুষের জন্য সিটির দরজা খোলা থাকবে এবং সিটির স্বার্থ সংরক্ষণে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, একজন ডাক্তার যেমন ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল ওষুধ দিয়ে রোগীকে সেবা দেননা, ঠিক তেমনি তিনি সিটির নেতা হিসাবে ইচ্ছাকৃতভাবে সিটির কোনও ক্ষতি করবেন না। এবং সবশেষে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “শুভ নতুন বছর, শুভ নতুন হ্যামট্রামেক।”
এদিকে মুসলিম হলেও দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্র ও ধর্মকে আলাদা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নবনির্বাচিত মেয়র আমির গালিব এবং সিটি কাউন্সিলের সদস্যরা। বর্তমানে হ্যামট্রামেক সিটি কাউন্সিলম্যান বাংলাদেশি দুইজন মুসলিম কাউন্সিলম্যান এবং একজন ইয়েমেনী মুসলিম কাউন্সিলম্যান রয়েছেন। তাঁরা হচ্ছেন কামরুল হাসান, নাঈম চৌধুরী ও মোহাম্মদ আলসোমিরি।
কাউন্সিলম্যান মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, তিনি নতুন নেতাদের সাথে কাজ করার জন্য উন্মুখ। তিনি বলেন, “এখন থেকে হ্যামট্র্যামেকের মেয়র এবং কাউন্সিলম্যান আমরা সবাই মুসলিম হলেও, সিটি হলের ভিতরে কিন্তু সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। হাসান বলেন, “সিটি হলের ভিতরে কোন ধর্ম থাকা উচিত নয়। ধর্ম থাকবে গির্জা, মসজিদ এবং মন্দিরে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, সবকিছুর পর আমরা সবাই হ্যামট্রামেক সিটির বাসিন্দা।”
শপথ নিয়ে অনন্য এক ইতিহাস গড়লেন মুসলিম মেয়র ও সব কাউন্সিলম্যান।এটা সিটির জন্য একটি মাইলফলক হিসাবে থাকবে। কারণ গত বছর ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হ্যামট্রামেক সিটি নির্বাচনে এক বিরল ইতিহাসের সূচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এবারেই প্রথম কোন সিটি নির্বাচনে মেয়র ও সকল কাউন্সিলম্যান পদে মুসলিম প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন। এই বিরল ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে হ্যামট্রামেক সিটি ও সিটির ২৮ হাজার বাসিন্দারা। যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সিটির একশত বছরের আমেরিকান রাজনৈতিক ইতিহাস ভেঙে দিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে এই প্রথমবারের মতো মুসলিম জনপ্রতিনিধিরা মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হেমট্রামেক সিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হলেন। যা এখন টক অব দ্যা কান্ট্রি ইউএসএ পরিণত হয়েছে।