কবিঃ এমএ সহিদ খান
একান্নবর্তী সংসারেতে
মোটা রুটির দিস্তে ছিল,
ফাটা কাপে চা ছিল ,
কাঠের পিঁড়িতে বসা ছিল।
মাছের ছোট পিস্ ছিল,
সুতোয় কাটা ডিম ছিল,
মাসে দু দিন মাংস ছিল,
এঁটো হাতে আড্ডা ছিল।
মাটির তৈরি উনুন ছিল,
ঘুটে কয়লার আঁচ ছিল,
বাটা মসলার ঝাঁজ ছিল,
ধুলো ঝাড়তে কুলো ছিল,
কাঁসার থালা-বাটি গেলাস ছিল।
তালপাতার পাখা ছিল,
মাটির কলসির জল ছিল,
রকে বসে আড্ডা ছিল,
নিত্য ঝগড়াঝাঁটি ছিল,
কিন্তু সব শেষে সুখ ছিল,
তৃপ্তি ছিল, শান্তি ছিল,
আহা ! সে এক সময় ছিল।
সকালবেলা ঘুম ভাঙা চোখে
বেতারের টিউন ছিল,
অনুরোধের আসর ছিল,
টিভিতে সন্ধ্যা সাজানো ছিল।
উত্তম, সুচিত্রা, সৌমিত্র ছিল,
হেমন্ত, সন্ধ্যা, মান্না দে
আর আব্দুল আলিম ছিল।
সন্ধ্যেবেলায় লোডশেডিং ছিল,
লাল গামছায় চান ছিল,
মুখ মুছতে মায়ের আঁচল ছিল,
দুপুরবেলায় শীতলপাটিতে শুয়ে
দাদি নানির মুখে গল্প ছিল,
হরেক হকারের হাক ছিল,
আহা ! সে এক সময় ছিল।
ঈদে কোলাকুলি,
নিমকি, ঘুগনি,নাড়ু ছিল,
নববর্ষের সালাম ছিল।
বিয়েতে কোমরে গামছা বেঁধে
পরিবেশনে আনন্দ ছিল।
বিকেল বেলায় বৃষ্টি হলে
ভিজে ভিজে খেলা ছিল,
আম, জাম, পেয়ারা গাছে
চড়তে বড় সুখ ছিল,
পুকুরেতে কজন মিলে
হ্যাঁপাইঝোড়ার মজা ছিল।
ভাইফোঁটায় এক বাড়িতে
তুতো ভাইবোনেরা জড়ো ছিল।
চক, ডাস্টার, ব্ল্যাক বোর্ড ছিল,
বেঞ্চির উপর দাঁড়ানো ছিল,
স্যারের মারের দুঃখ ভোলাতে
ভালোবাসার প্রলেপ ছিল।
কাটা ঘুড়ির পেছন পেছন
দৌড়ে চলার সঙ্গী ছিল।
আহা! সে এক সময় ছিল।
ছোটবেলার সেসব ছবি
কবে কোথায় হারিয়ে গেল,
রোমন্থনে ভাবতে থাকি
সে একটা সময় ছিল।