সিলেট ওসমানীনগরে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন নিয়ে বিএনপি জোট মনোনিত গণফোরাম থেকে সিলেট-২ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান ও সরকারদলীয় আওয়ামীলীগ অঙ্গ সঙ্গঠনের নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি। একই সময়ে একই উন্নয়ন কাজের উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছে দুটি পক্ষ। এঘটনায় স্থানীয় ক্ষমতাশীল দল সহ এলাকা জুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এমপি মোকাব্বির খান খাদিমপুরের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন যাতে না করেন সে কারণে গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত অবধি স্থানীয় উমরপুর বাজারে আওয়ামীলী, যুবলীগ ছাত্রলীগ সহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন এবং উমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারগণ মোকাব্বির খানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
মঙ্গলবার রাতেই স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সাবেক সংসদস সদস্য খাদিমপুর গ্রামের বাসিন্দা মরহুম আশরাফ আলী স্মরণে ক্লিনিকের দেয়ালে ফলক বসিয়ে উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করবে আওয়ামীলীগ। আর সেই উন্নয়ন কাজ এমপি মোকাব্বির খানকে উদ্বোধন করতে দেবে না আওয়ামীলীগ। এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন না করতে খাদিমপুর এলাকায় না আসতে এমপি মোকাব্বির খানকে মোঠোফনে অনুরোধ জানালেও মোকাব্বির খান খাদিমপুর আসতে অনড়।
সম্প্রতি সিলেটের ওসমানীনগরের উমরপুর ইউনিয়নের খাদিমপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সীমানা প্রাচীর স্থাপনের জন্য দেড় লাখ টাকার সরকারি বরাদ্দ আসে। প্রাচীরের নির্মাণ কাজ শেষে বুধবার (৬ অক্টোবর) গণফোরাম থেকে নির্বাচিত স্থানীয় সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানকে দিয়ে তা উদ্বোধনের উদ্যোগ নেন প্রবাসীসহ এলাকার কিছু লোক। বিষয়টি জানার পর গত শনিবার (২ অক্টোবর) স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ প্রবাসী কাপ্তান মিয়ার সাথে দেখা করেন। এ সময় তারা সংসদ সদস্যকে দিয়ে উদ্বোধন না করানোর অনুরোধ জানিয়ে একই তারিখে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে জেলা মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির উদ্দিনকে দিয়ে দেয়ালে নামফলক বসানোর ঘোষণা দেন।
এদিকে বুধবার দুপুর ২টার দিকে খাদিমপুর এলাকাবাসীর ব্যানারে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও উমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা নামফলক ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল খালিকের সভপতিত্বে ও নানু মিয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রদান অতিথি ছিলেন, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু, সহ-সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ, চেয়রম্যান গোলাম বিকরিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান পীর মজনু মিয়া, শওকত আহমদ সায়মন, দবির মিয়া, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থ, যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল আহমদ।
আওয়মলীগের অনুষ্ঠান শেষের দিকে একটি গাড়িবহর নিয়ে অনুষ্ঠান স্থলের দিকে এমপি মোকাব্বির খান রওয়ানা দিলে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় আওয়ামীলীগের অনুষ্ঠান শেষের পর মোকাব্বির খান এমপি বিকেল সাড়ে চারটার দিকে খাদিমপুরে গিয়ে উপস্থিত হন। এসময় পুরো উমরপুর ও খাদিমপুর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। পরে খাদিমপুরের এলাকাবাসীর ব্যানারে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মোকাব্বির খান এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদাল মিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান নুনু মিয়া, প্রবাসী গোলাম কিবরিয়া ও কাপ্তান মিয়া।
প্রবাসী কাপ্তান মিয়া বলেন, গতকাল বুধবার আমাদের এলাকার উন্নয়ন কাজ এমপি মোকাব্বির খান উদ্বোধন করার কথা ছিল। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সকল সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমপিকে দিয়ে উদ্বোধন না করার অনুরোধ করলে আমি বিষয়টি এমপি সাহেবকে অবগত করেছি। পরে বিকেলে মোকাব্বির খান এমপি খদিমপুরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু বলেন, ২০১১ সালে তৎকালিন সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী এই ক্লিনিকের উদ্বোধন করেছেন, এখন নতুন করে উদ্বোধনের কারণ আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। দেয়ালের গায়ে স্থানীয় প্রয়াত এমপি আশরাফ আলীর নামে নামফলক বসিয়েছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। কিন্তু এমপির কারণে তা নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হচ্ছে।
উমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে এই ক্লিনিকের অনেক সংস্কার করা হয়েছে এবং বর্তমানে সরকারি ব্যয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মিত হয়েছে। বুধবার প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য আশরাফ আলীর নামে সীমানা প্রাচীরের নামফলক স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে শোনছি সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান নাকি একই দিনে এর উদ্বোধন করবেন। যা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।
ওসমানীনগর থানার ওসি শ্যামল বণিক বলেন, প্রশাসনের মধ্যস্থতায় কোনো রকম অঘটন ছাড়াই দুপক্ষ পৃথক পৃথক অনুষ্ঠান করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রশাসন অসস্তিতে ছিলাম উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে দুপক্ষই আলাদা আলাদা ভাবে অনুষ্ঠান করেছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।