বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কোথায় ছিল কমলার ভুল?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন। ১৭৯৮ সালের মার্কিন মসনদে বসেন তিনি। তবে এরপর থেকে অনেক প্রেসিডেন্ট এসেছেন দেশটিতে, কিন্তু ২৩৫ বছরের ইতিহাসে কোনো নারী প্রেসিডেন্ট পায়নি যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাট হিলারি ক্লিনটন রিপাবলিকান ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও হেরে যান। পপুলার ভোটে এগিয়ে থেকেও ইলেক্টোরাল ভোটে পরাজিত হন।

তবে এবার কমলা হ্যারিসকে নিয়ে আশা দেখেছিল ডেমোক্র্যাটরা। বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসে অনেকে ধরে নিয়েছিল হ্যারিস হতে পারেন প্রথম মার্কিন নারী প্রেসিডেন্ট। তবে এবারও হতাশ হতে হলো। সর্বশেষ দোদুল্যমান উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। এর ফলে ট্রাম্প জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়ে গেছেন। ট্রাম্পের ঝুলিতে এখন পর্যন্ত ২৭৫টি ইলেকটোরাল ভোট জমা পড়েছে। কমলার ঝুলিতে জমেছে ২২২ ইলেক্টোরাল ভোট।

হ্যারিসের এমন হারের ক্ষেত্রে বিশ্লেষকদের মত, অন্যতম প্রধান ভুল ছিল প্রচারণায় ব্যক্তিগত অবস্থান স্পষ্ট করতে না পারা। সংবাদমাধ্যম এবিসির ‘দ্য ভিউ’ অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ পর্বে হ্যারিসের পক্ষের কিছু নারীর মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস বিরাজ করছিল। সেই অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করেন, ‘বিগত চার বছরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতি থেকে ভিন্ন কিছু করার কথা আপনার মনে হয়েছে কিনা?’ এই প্রশ্নের উত্তরে হ্যারিস বলেন, ‘একটি জিনিসও আমার মনে আসে না’।

তার এ ধরনের উত্তর অনেক ডেমোক্রেট সমর্থকের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে এবং প্রশ্ন উঠতে থাকে তার স্বকীয় অবস্থান নিয়ে। যদিও তিনি পরে বলেছিলেন, তিনি তার মন্ত্রিসভায় একজন রিপাবলিকানকে রাখতে চাইবেন। কিন্তু ততক্ষণে তার দলের সহযোগীরা তার সেই মন্তব্যকে সংশোধন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের বিভ্রান্তিকর উত্তর তাকে ভোটারদের কাছে আরও দুর্বল প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করে।

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব

কমলা হ্যারিসের প্রচারণার শুরু থেকেই তার দল বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। প্রচারণা পরিচালনা এবং রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে বেশ কিছু উচ্চপদস্থ ডেমোক্রেট উপদেষ্টা ও সহযোগীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এই অভ্যন্তরীণ সংঘাত প্রচারণার কৌশলগত ভুলগুলোর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়, যা প্রার্থী এবং ভোটারদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে।

ডেমোক্রেট দলের ভেতরে অনেকেই মনে করেন, হ্যারিস যদি পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোশ শাপিরোকে তার সহ-প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতেন, তাহলে এই রাজ্যে তার সমর্থন আরও দৃঢ় হতো। শাপিরোর উত্সাহ এবং কৌশলগত ভাবনা তাকে একটি শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করত। তবে হ্যারিস তার স্বতন্ত্র অবস্থান ধরে রাখার জন্য মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজকে বেছে নেন।

ডেমোক্র্যাটদের ভুল নীতি

হ্যারিস তার প্রচারণার অনেক অংশে বাইডেন প্রশাসনকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানাতে গিয়ে প্রায়ই দ্বিধায় ভুগেছেন। তিনি তার দলের অন্যদের চেয়ে বাইডেনের বিভিন্ন নীতিমালার বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। কারণ তিনি হয়তো বিশ্বাস করতেন যে, তা হবে তার প্রতি অবিশ্বস্ততার প্রকাশ।  কিন্তু ভোটারদের একটি বড় অংশ তার কাছ থেকে আরও সরাসরি এবং শক্তিশালী অবস্থান আশা করেছিলেন।

অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় দেখা যায়, ভোটারদের বেশিরভাগই মনে করতেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সঠিক পথে নেই। ফলে কমলা হ্যারিসের এমন কোনো ভূমিকা ছিল না, যা তাকে একটি পরিবর্তনের শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করতে পারতো।

অনেক ডেমোক্রেট নেতাই ধারণা করেছিলেন যে, বাইডেন যদি ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর থেকে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিতেন, তবে ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য একটি শক্তিশালী এবং প্রতিযোগিতামূলক প্রাথমিক নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হতে পারতো।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১