মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ডলুছড়াপুঞ্জিতে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী খাসিয়াদের জীবনও সেখানকার পরিবেশের সুরক্ষা প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছেন ১৩ বিশিষ্ট নাগরিক। আজ রোববার তাঁদের পক্ষ থেকে এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
চিঠিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, বেসরকারি সংগঠন ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক সদস্য শারমিন মুরশিদ, বাপার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আদিবাসী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী জোসেফ গমেজ ও বাপার সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিমের নাম রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, খাসিয়া লোকজন যুগ যুগ ধরে প্রথাগত ও ঐতিহ্যগত ভূমিতে বসবাস করে আসছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সনদ আদিবাসীদের এ প্রথাগত ভূমি মালিকানার সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আদিবাসী জনগণের জন্য নিবেদিত আইএলও কনভেশন-১০৭ বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালে অনুসমর্থন করেছেন। বন বিভাগ সামাজিক বনায়নের নীতিমালা উপেক্ষা করে ডলুছড়াপুঞ্জির খাসিয়াদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে একতরফাভাবে উপকারভোগীদের তালিকা করেছে। এতে খাসিয়াদের সঙ্গে উপকারভোগীদের সমস্যা ও জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে সেখানে দুষ্কৃতকারীরা খাসিয়াদের পানের জুম ধ্বংস করেছে। খাসিয়াদের ওপর হামলাও চালিয়েছে। সেখানকার জমি নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।
এ অবস্থায় ডলুছড়ার খাসিয়া লোকজনের যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয় এবং প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে সামাজিক বনায়নের প্রকল্প গ্রহণ না করা হয়, সে ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনারকে অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। ডলুছড়াপুঞ্জির খাসিয়াদের পাশে থেকে তাঁদের জীবন ও পরিবেশের সুরক্ষা প্রদানের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে বিভাগীয় কমিশনার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন বলে আশা এই বিশিষ্ট নাগরিকদের।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কর্মধা ইউনিয়নে দুর্গম বিভিন্ন টিলা এলাকায় ২৫টি পুঞ্জি (গ্রাম) রয়েছে। এসব পুঞ্জিতে ১০ হাজারের বেশি খাসিয়া ও গারো মানুষের বসবাস। পান চাষ ও তা বিক্রি করে তাঁদের সংসার চলে। সেখানে ১৪৫ একর জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় ডলুছড়াপুঞ্জির খাসিয়া লোকজনের সঙ্গে বন বিভাগের মামলা-মোকদ্দমা চলছে। সম্প্রতি বন বিভাগের মুরইছড়া বিটের উদ্যোগে বিরোধপূর্ণ জমির পাশে ২৫ একর জায়গায় সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বাগান করা হয়। এ নিয়ে বন বিভাগ ও সামাজিক বনায়নের স্থানীয় উপকারভোগীদের সঙ্গে পুঞ্জির বাসিন্দাদের সংঘর্ষ, হামলা–মামলা এবং গাছ ও পানগাছ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটে।