
রাজনীতিতে নানা সমীকরণ। দোদুল্যমান পরিস্থিতি। মতানৈক্য। কেউ প্রচলিত পদ্ধতিতে ভোট চান। কেউ সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে। আবার কারও দাবি সংস্কারের আগে নির্বাচনে না যাওয়া। তার মাঝে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মতো বড় শঙ্কা তো আছেই। এসব শঙ্কা, সংশয় আর উৎকণ্ঠার মধ্যেই নির্বাচনের পথে হাঁটছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন। এরই মধ্যে প্রস্তুত রোডম্যাপও। এই সপ্তাহেই তা ঘোষণা করবে ইসি। ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, নির্বাচনী রোডম্যাপের সবক’টি বিষয় সমন্বয়ের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে খসড়ার কাজও শেষ হয়েছে। এই সপ্তাহেই ঘোষণা। ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে সংস্থাটি যেসব চ্যালেঞ্জ দেখছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-ইসি’র ওপর আস্থা ফেরানো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার অনাস্থা ও সংকট নিরসন করা এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিরপেক্ষ ও সক্রিয় ভূমিকায় রাখা, নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপপ্রয়োগ, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমুক্ত রাখা এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপনাও অন্যতম চ্যালেঞ্জ মনে করছে ইসি। প্রথমবার বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার সুযোগ দেয়াটাও একধরনের চ্যালেঞ্জ মনে করা হচ্ছে।
ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এত চ্যালেঞ্জ আর শঙ্কার মধ্যেও রোডম্যাপ চূড়ান্ত করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে হাঁটছে সংস্থাটি। গতকাল সোমবার নির্বাচন ভবনে মাসিক সভা শেষে ইসি’র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনকে সামনে রেখে এর রোডম্যাপের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, কর্মপরিকল্পনার ব্যাপারে আমি বলেছিলাম, আমরা এই সপ্তাহে এটা করবো। হ্যাঁ, এটা কো-অর্ডিনেট করা হচ্ছে। কর্মপরিকল্পনার তো আন্তঃঅনুবিভাগ সম্পর্কিত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে ড্রাফটটা করা হয়েছে। ড্রাফটটা এখন কমিশনে দিয়ে আমরা এপ্রুভ করবো। আমার বিশ্বাস যে এটা আমরা এই সপ্তাহের ভেতরে আপনাদেরকে দিতে পারবো।
আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, মাঠ প্রশাসনে নিয়োজিত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় কীভাবে হবে, তাদের কার্যপরিধি কী হবে, ফোকাল পার্সন নির্ধারণের ব্যাপার, পরিপত্র নির্দেশনা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কিত যে কাগজপত্র তৈরি করা- এ বিষয়ে এখন বৈঠক চলছে। আমরা কো-অর্ডিনেট করার চেষ্টা করছি যেন কাজগুলোকে গুছিয়ে রাখতে পারি।
সীমানা আপত্তি শুনানি রোববার: এবার ৩০০ আসনের মধ্যে ৮৩টি আসনের দেড় সহস্রাধিক দাবি-আপত্তি এসেছে। শুনানি শেষ করে দ্রুত নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া চলছে। ইসি সচিব বলেন, সীমানা নির্ধারণের যেসব আপত্তি এসেছে, ২৪শে আগস্ট থেকে শুনানি শুরু করবো। একটানা চারদিন চলবে এবং এটাকে ফাইনালাইজ করবো।
ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ নিয়ে পরিকল্পনা: এবার পৌনে ১৩ কোটি ভোটার দাঁড়াবে নির্বাচনের সময়। সবশেষ গত সংসদ নির্বাচনে ১২ কোটির বেশি ভোটারের জন্য ৪২ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্র ছিল। এবার ভোটকেন্দ্র না বাড়িয়ে কীভাবে সমন্বয় করা যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা নিচ্ছে ইসি সচিবালয়। সচিব আখতার আহমেদ বলেন, মান্থলি কো-অর্ডিনেশন কমিটি মিটিংয়ে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি যে, ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়বে না। বাড়বে না এর অর্থ এই নয় যে, অতীতে যা ছিল সেটাই একদম হুবহু এটা রাখতে হবে বা সংখ্যা। যৌক্তিক বিবেচনায় যদি বাড়ে সেটা হবে। প্রতি ৩০০০ ভোটারের জন্য একটা কেন্দ্র করে ভোটার উপস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করছে ইসি। তিনি বলেন, আমাদের ধারণা, ভোটকেন্দ্র না বাড়িয়েও শুধু ভোটার উপস্থিতির বিষয়টাকে যদি আমরা বিবেচনায় নেই তাহলে হয়তো দেখা যাবে যে, এটাকে সমন্বয় করতে পারছি। সচিবের মতে, প্রতি কেন্দ্রে পুরুষদের জন্য এটা আছে ৫০০ জনের জন্য একটা বুথ। এটাকে যদি ৬০০ জনের জন্য করতে পারি তাহলে দেখা যেতে পারে যে, একোমোডেট করতে পারবো। সেইভাবে আমরা একটু হিসাব করছি এবং হিসাব করে যদি আমরা দেখি এটা গ্রহণযোগ্য, তাহলে আমরা সেই মাত্রায় কাজ করবো।
২২ দলের তদন্ত শুরু: নিবন্ধনপ্রত্যাশী বাছাইয়ে টিকে থাকা ২২টি দলের অফিস, কমিটির তদন্তের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সচিব। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের যে ২২টা দল প্রাথমিকভাবে বাছাই হয়েছে, তাদের মাঠ পর্যায়ে পাঠানো দরকার- সেটা পাঠিয়ে দিয়েছি। আর যাদেরটা বাতিল বা বিবেচনাযোগ্য হয়নি তাদেরকে আমরা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছি। এবার কোনো কারণে বা কোনো শর্তের অপূর্ণতার কারণে তাদেরটা বিবেচনা করা যায়নি- সেটা স্পেসিফিক করে জানিয়ে চিঠি দেয়া হচ্ছে। আখতার আহমেদ বলেন, ভোটকেন্দ্রের নীতিমালার ব্যাপারটা সুযোগ এসেছে বলে পর্যালোচনা করা যাচ্ছে। কোনো জিনিসই একদম অবধারিত না, এটা পরিবর্তন হতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ে জানতে চাইলে সচিব আরও বলেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা তো আরও পরের ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমাদের কনসার্ন হওয়ার এই মুহূর্তে কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না।