আমাদের জীবনটা যেন সাপলুডুর খেলার এক বিশাল ছক। শুরুতে একের পর এক ছয় ফেলে, ঠিক সময় বাড়িয়ে দেওয়া মইতে চেপে লাফ দিয়ে দিয়ে এগিয়ে যাওয়া। তারপর হঠাৎ নিচে পড়া শুরু। কখনো সাপের মুখে, কখনো সাপের লেজ ধরে নামতে হয়। নামতে নামতে আর মনেই থাকে না সেই মই দিয়ে ওপরে ওঠার দিনগুলোর কথা।লুডুর গুটিতে এমনই সংখ্যামান আসবে যে সাপের পেটেও যেতে হয়, এমনটা তো নাও হতে পারে। এমনও তো হয়, যে সংখ্যামান এল, তাতে মই বেয়ে অনেক ওপরে ওঠাও সম্ভব। জীবনের সাপলুডুর বোর্ডে তো শুধু সাপই থাকে না, মইও থাকে! জীবনের দানে ওই মইয়ে ওঠার সংখ্যাটি আসবে না—এটা কে বলল? সর্বোচ্চ মানেই সবচেয়ে ভালো—এমনটা তো নাও হতে পারে। হয়তো দুই দুইবার ছক্কার পর পাঁচ পড়ল—মোট ১৭। অর্থাৎ, আমি লুডু খেলায় সবচেয়ে বেশিটাই পেলাম। অথচ চলে গেলাম ইয়া লম্বা এক সাপের পেটে; এমনও তো হয়! আবার এমনও তো হয়—কোনো এক দানে সবচেয়ে কমটি, মানে এক পড়ল, আর আমি মই বেয়ে তরতর করে উঠে গেলাম অনেক উঁচুতে।আশপাশের সবকিছুকেই এক সময় মনে হতো অন্য রকমের, অন্য কিছু। আসলে আমরা জীবনটা যেভাবে যাবে ভাবি, সেভাবে যায় না। জীবন যায় জীবনের মতোই। জীবনের রং কল্পনাতে একভাবে ধরা দেয়। কিন্তু আসল রংটা অন্য রকম। জীবনটাকে নিয়ে খেলতে খেলতেই জীবন পার করে দেব—এটা ভাবলেই যে ও রকমভাবেই জীবনটা কেটে যাবে, তেমনও নয়। কী হবে, কী হবে না—এর সবকিছুই আগে থেকে ঠিকঠাক করা। আমাদের কাজ শুধু এই রঙ্গমঞ্চে নিজের মতো করে চমৎকার অভিনয় করে যাওয়া। যার অভিনয় যত নিপুণ, সে তত ঘনিষ্ঠভাবে জীবনের স্বাদ পায়।কমের খেলা বোঝাটাই সবচেয়ে কঠিন! সবচেয়ে বেশিটাই সবচেয়ে ভালো—এমনটা নয় সব সময়। দেখতে হবে, সেটা আদৌ কতটা দরকার! জীবনের খেলায় ৯ বা ১৮—এসব সংখ্যার কী দরকার? জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে ঠিক সংখ্যাটি বেছে নিতে জানাটা অনেক বড় আর্ট! যারা সঠিক সংখ্যা সঠিক সময়ে বেছে নেয়, তারাই হয় জীবনের সাপলুডু খেলার বিজয়ী।