দিরাই উপজেলার হাওর থেকে কালো মাটি তোলার হিড়িক পড়েছে। এতে এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা যায়, যুগ যুগ ধরে কয়লা (স্থানীয় ভাষায় কালামাটি) উত্তোলন করে দৈনন্দিন জ্বালানির কাজে ব্যবহার ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন হাওরপারের কৃষকরা। কয়লা ব্যবসায়ীরা নিজের জমি বা অন্যের জমি লীজ নিয়েও কয়লা তুলছেন। এতে এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে কয়লা তুলেন শ্রমিকরা। মাটির নিচে সুড়ঙ্গ করে ১৫-২০ হাত গভীরে গিয়ে এ কয়লা সংগ্রহ করেন তারা। মাটি তোলার পাশাপাশি চলে তা শুকানোর কাজ। এসব কয়লা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করে মজুদ রাখেন। পরে বর্ষাকালে মজুদকৃত ওইসব কয়লা বস্তা প্রতি মণ ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
প্রতি বছরের হেমন্ত মৌসুমে ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত চলে এ মাটি তোলার কাজ। এসব কয়লা সংগ্রহ করে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন রকমের লাকড়ি বানানো হয়। যা দিয়ে সারাবছর রান্নার কাজে ব্যবহার করেন এলাকার নারীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার জাহানপুর গ্রামের নারী-পুরুষ হাওরের ছোট ছোট জমির খাল থেকে কয়লা (কালামাটি) উত্তোলন করে বিভিন্ন রকমের লাকড়ি বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, এসব মাটি দেখতে গরুর গোবরের মতো। গোবর দিয়ে তৈরি লাকড়ি হালকা হয়। তবে মাটির তৈরি লাকড়ি কাঠের মতো শক্ত ও ভারি হয়। এসব লাকড়ি অন্য লাকড়ির তুলনায় রান্নায় কম লাগে। তাই এসব মাটির লাকড়ি গৃহিনীরা পছন্দ করেন। লাকড়ি তৈরির বর্ণনা দিতে গিয়ে তারা বলেন, প্রথমে হাওরের খাল থেকে কালামাটি উত্তোলন করে উঁচু স্থানে স্তুপ করে রাখা হয়। কয়েক দিন পর রোদে শুকিয়ে কিছুটা শক্ত হলে বানানো হয় বিভিন্ন রকমের লাকড়ি। পরে বেশ কিছু দিন এসব লাকড়ি রোদে শুকাতে হয়। লাকড়ি পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে লাকড়ি ঘরে নিয়ে রাখা হয়। যা দিয়ে তারা সারাবছর রান্না করেন। গ্রামের অনেক দরিদ্র পরিবারের মানুষজন এসব লাকড়ির উপর নির্ভরশীল। তাই হাওর পাড়ের মানুষেরা সারাবছরের খাবার হিসেবে ধান গোলায় তোলার আগে লাকড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। পরে বৈশাখ মাসে ধান কাটা, মাড়াই করা ও গোলায় তোলা নিয়ে হাওর, মাঠে-ময়দানে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তখন আর লাকড়ি তৈরির সময় পাওয়া যায় না। যে কারণে এখন তারা লাকড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার জাহানপুর গ্রামের কয়লা ব্যবসায়ী চন্দ্রলাল দাস বলেন, কৃষির পাশাপাশি তিনি এ ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করে আসছেন এবং আর্থিকভাবে লাভবানও হয়েছেন।