হাদিস শরিফে কিছু আমলের কথা বলা হয়েছে, যার মাধ্যমে হায়াত বৃদ্ধি পায়। যেমন- আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে লোক তার রিজিক প্রশস্ত করতে এবং আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। (বুখারি: ৫৫৫৯)
অন্যা হাদিসে এসেছে, দোয়া ছাড়া আর কিছুই তাকদির রদ করতে পারে না আর নেক আমল ছাড়া আর কিছুই বয়সে বৃদ্ধি ঘটায় না। (তিরমিজি: ২১৩৯) সুতরাং বোঝা গেল, দোয়ার মাধ্যমেও হায়াত বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ, দোয়াও নেক আমল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।’ (সুরা মুমিন: ৬০)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দোয়া ইবাদতের মগজ।’ (তিরমিজি: ৩২৯৩) তিনি আরো বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (তিরমিজি: ৩৩৭০)হায়াত বৃদ্ধির ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন- শরীরের শক্তি বৃদ্ধি হওয়া অথবা হায়াতে বরকত পাওয়া অথবা অনেক নেক আমল করার তাওফিক লাভ হওয়া অথবা আখেরাতে উপকারে আসবে—এমন সাজানো গুনাহমুক্ত জীবন পাওয়া অথবা মৃত্যুর পরেও সুনাম স্থায়ী থাকা অথবা- (লওহে মাহফুজে) তার বয়স শর্তযুক্তভাবে লিপিবদ্ধ, যেমন এভাবে লেখা আছে যে, যদি সে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে (বা যদি সে হায়াত বৃদ্ধির দোয়া করে) তাহলে হায়াত বৃদ্ধি পাবে, অন্যথায় পাবে না। (ফাতহুল বারি: ৪/৩০২) উল্লেখিত আলোচনায় এ কথা প্রমাণিত হয় যে, দোয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ জীবন লাভ করা যাবে। এক্ষেত্রে কোরআন হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো যত বেশি সম্ভব পড়তে হবে। এছাড়াও সুস্থতা ও সুস্বাস্থ্যের দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়া যেতে পারে। একইসঙ্গে নেক আমলের তাওফিক লাভের দোয়া করা যেতে পারে। যেমন-
১. اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي سَمْعِي اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সাময়ি; আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাসারি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবারি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা। অর্থ: হে আল্লাহ, আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়। হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৭০৬)
২. اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الصِّحَّةَ، وَالْعِفَّةَ، وَالأَمَانَةَ، وَحُسْنَ الْخُلُقِ، وَالرِّضَا بِالْقَدَرِ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাস সিহহাতা ওয়াল ইফফাতা ওয়াল আমানাতা ওয়াহুসনাল হুলক্বি ওয়ার রিদা বিল ক্বাদরি।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সুস্বাস্থ্য, পুত-পবিত্র চরিত্র, আমানতদারি এবং তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকতে পারার সামর্থ্য প্রার্থনা করছি।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৩০৭)
৩. اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল-বারাসি ওয়াল-জুনুননি ওয়াল-জুযামি ওয়া মিন সায়্যিইল আসক্বাম।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি শ্বেত, পাগলামি, কুষ্ঠ এবং ঘৃণ্য রোগগুলো থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৫৪)
৪. اَللّٰهُمَّ أَعِنَّا عَلٰى ذِكْرِكَ وَ شُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَ تِكَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আয়িন্না আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিয়া ওয়া হুসনে ইবাদাতিক।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের সাহায্য করুন আপনার স্মরণ, আপনার শোকর ও আপনার সুন্দর বন্দেগির জন্য।’ (আবু দাউদ: ১৫২২)
পাশাপাশি হায়াত বৃদ্ধির আমলগুলোর প্রতি নজর দিতে হবে। হাদিসের আলোকে হায়াত বৃদ্ধির বিশেষ তিন আমল হলো- মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা। (তিরমিজি: ২১৩৯; বুখারি: ৫৯৮৬; মুসনাদ আহমদ: