হ্যামট্রামেক শহরের সামাজিক এবং রাজনৈতিক অঙ্গন গত ২০ বছরেরও বেশি সময়ব্যাপী যার দৃপ্ত পদচারণায় মুখর, তিনি বর্তমান সিটি মেয়ের ক্যারেন মাজেউস্কি।
আগামি ২ নভেম্বর (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী সিটি মেয়র নির্বাচনে ক্যারেন মাজেউস্কি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আমীর গালেব এর সঙ্গে। এই মূহুর্তে হ্যামট্রামেকবাসীদের দৃষ্টি নিবদ্ধ বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনের ফলাফলের দিকে।
বর্তমান মেয়র ক্যারেন এই নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী, আর তা হবার যথেষ্ট কারনও রয়েছে। গত ১৬ বছর থেকে এক নাগাড়ে মেয়র পদে জয়ী হয়ে এসেছেন ক্যারেন। তাঁর প্রতি সিটির জনসাধারনের আস্থা-নির্ভরতা এবং নিজ দায়িত্বভার পালনে যোগ্যতা-একাগ্রতা-বিশ্বস্ততাই তাঁর এই প্রাপ্তির পিছনে প্রধান কারন বলে মনে করছেন অনেকেই।
সব ধরনের প্রশাসনিক অনুষ্ঠানে তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি ছাড়াও, সামাজিক এবং হ্যামট্রামেক সিটিতে বসবাসকারী বিভিন্ন কমিউনিটি আয়োজিত প্রায় সব অনুষ্ঠানেই উপস্থিত থাকেন হাস্যমুখী, প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্না মেয়র ক্যারেন।
একজন পি, এইচ, ডি ডিগ্রী হোল্ডার হওয়া সত্তেও প্রথম পরিচয়ে নিজেকে ডক্টর ক্যারেন অথবা সিটি মেয়র হিসাবে পরিচয় না দেয়াটাই তাঁর নিরহংকার চরিত্রের প্রতিফলন।
গত প্রায় ১৬ বছর ধরে মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হ্যামট্রামেকবাসীর পাশে তাদের সুসময়, দু:সময়, হাসি- কান্না সব কিছুতেই ক্যারেন ছিলেন এবং এখনো আছেন।সাধ্যমতো সমাধান করছেন নগরবাসীর নানাবিধ সমস্যা।
হ্যামট্রামেক সিটিতে বসবাসরত প্রায় সব সম্প্রদায়ের জন্যই অনেক উন্নয়নমুখী কাজ করে গেছেন ক্যারেন, এর মধ্যে অনেক কাজের সময় তাঁকে নিতে হয়েছিলো পেশাগত এমনকি জীবনের ঝুঁকি। এই রকমই, বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য তিনি করে গেছেন বেশ কিছু কাজ।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে মুসলিম ভোটারদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরনের প্রতিবাদে তৎকালীন ডেপুটি মেয়র সাহাব আহমেদের সাথে এক যোগে ইউ.এস জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে অভিযোগ দায়ের করার ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন ক্যারেন।
তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে ওই ঘটনার সাথে জড়িতদের দোষী সাব্যস্ত করে বিচারের আওতায় আনা হয়, পরবর্তী ৫ বছর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়, সর্বোপরি তারপর থেকে নির্বাচন সম্পর্কিত সব ধরনের সরকারি ডকুমেন্টস ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা এবং আরবিতেও লেখার নিয়ম চালু করা হয়।
এ ছাড়াও ২০০৪ সালে লাউড স্পীকারে আজান প্রচারে আইন পাশ করার ক্ষেত্রেও তৎকালীন প্রথম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সিটি কাউন্সিলর সাহাব আহমেদ এর প্রস্তাবকে একজন খ্রীস্ট ধর্মাবলম্বী হয়েও নিজ কমিউনিটির কট্টরপন্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে, সার্বিকভাবে সাপোর্ট দেন ক্যারেন।
এছাড়াও ক্যারেন মেয়র থাকা সময়েই বাংলাদেশ এভিনিউ স্থাপিত হয়। বিভিন্ন সময়ে এই এভিনিউ ক্লোজ করে, এখানে মেলা বা অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজনে মেয়রের সর্বতো সহায়তা ছিল সব সময়।
তাছাড়া, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পূজা-আর্চাসহ, ধর্মীয় শোভা যাত্রার জন্য সিটির বিভিন্ন সড়ককে ব্যবহার করার জন্যও সানন্দে অনুমতি দিয়ে গেছেন ক্যারেন। মোট কথা এই সিটিতে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে ক্যারেন এর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।
এবারের নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও বরাবরের মতো ক্যারেন এর জনসংযোগ ছিল চোখে পড়ার মতো। সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের সাথে তিনি মিশে যান অতি সহজেই। তাঁর প্রবল জনপ্রিয়তা এবং গ্রহনযোগ্যতার এও একটা কারন বটে। সেই তুলনায় তাঁর প্রতিপক্ষ কিন্তু অনেকটাই ম্লান।
আমীর গালিব একজন স্থানীয় চিকিৎসক। এবং ইয়েমেনি অভিবাসী ও রাজনীতিতে নবাগত। তিনি জয়ী হলে মিশিগানে প্রথম আরব ও মুসলিম মেয়র হবেন। মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জনসংযোগের ক্ষেত্রে নিজের কমিউনিটির বাইরে আমীর গালেবের অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
ভোটার সংখ্যার দিক থেকে আরব কমিউনিটি যথেষ্ট শক্তিশালী হলেও, বহু সাম্প্রদায়িক শহর হ্যামট্রামেকের মেয়র পদে যোগ্য প্রার্থীকে আরো বেশি সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাওয়া দরকার বলে মনে করেন কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
ক্যারেন মেজউস্কি নিজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা আর জনসাধারনের কাছে তাঁর গ্রহনযোগ্যতার ব্যাপারে আস্থাবান। হ্যামট্রামেকের উন্নত ভবিষ্যৎ ও একটি নিরাপদ শহর গড়ে তোলার স্বার্থে ক্যারেন নাগরিকদের কাছে ভোট প্রত্যাশা করছেন এবং প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ধর্ম, বর্ণ না দেখে তিনি আশা করেন জনগন তাঁকেই নির্বাচিত করবে।