আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে মৃৎশিল্পে। এতে স্বল্প সময়ে এবং অল্প খরচে অধিক পরিমাণে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করতে পারছেন মৃৎশিল্পীরা। আর নিজেদের টিকিয়ে রাখতে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের নশরতপুর গ্রামের পালপাড়ার কুমারদের জীবন-জীবিকা। ফলে বদলে যাচ্ছে মৃৎশিল্পীদের অর্থনৈতিক অবস্থাও।
মৃৎশিল্পীদের আর প্রচলিত পদ্ধতিতে চাক ঘোরাতে হয় না। এখন আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করছেন মৃৎশিল্পের বিভিন্ন উপকরণ। ইলেকট্রিক মর্টারের সাহায্যেই ঘুরছে পাল সম্প্রদায়ের মাটির জিনিসপত্র তৈরির চাক। এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন ব্যবহার করে মৃৎশিল্পের কারিগরদের শারীরিক শ্রম সাশ্রয় হচ্ছে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নিজের ক্যারিয়ারকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছেন পাল সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা মৃৎশিল্পের মালামাল তৈরি করছেন ইলেকট্রিক মর্টারের সাহায্যে।
চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর গ্রামের দিঘলনালী পাড়ার মৃত নছিরউদ্দিন শাহর ছেলে এস এম মজিবর রহমান। পেশায় সে একজন ইলেকট্রিশিয়ান। তার চিরিরবন্দরের রানীরবন্দরে খানসামা সড়কের দরগাহ্পাড়ে মেসার্স রাজা ইলেকট্রিক অ্যান্ড ওয়ার্কশপ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি ভাবতে ও স্বপ্ন দেখতে থাকেন কীভাবে পাল সম্প্রদায়ের মানুষদের কষ্ট লাঘব করা যায়। এ স্বপ্ন ও ভাবনা থেকেই তিনি উদ্ভাবন করেন কুমারদের জন্য বৈদ্যুতিক চাক মেশিন। তার এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিনটি এসি বৈদ্যুতিক মটরের পরিবর্তে এসি থেকে ডিসিতে রুপান্তরিত হয়ে স্বল্প বিদ্যুৎ খরচে ডিসি মটর ব্যবহার হচ্ছে এবং এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিনটি ঘুরছে। এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন ২.৫ অশ্ব শক্তিতে ১ হাজার ৪৭০ আরপিএম (গতি) রেগুলেটরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন তৈরিতে খরচ পড়ছে মাত্র সাড়ে ৯ হাজার টাকা।
মৃৎশিল্পী নিরঞ্জন পাল, শ্যামল চন্দ্র পালসহ অনেকে জানান, আগে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাটি দিয়ে সারাদিন মাত্র ১০০ থেকে ১৫০টি ফুলের টব বা হাড়ি-পাতিল তৈরি করতে পারতাম। এখন এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন দিয়ে আমরা সারাদিন ৭০০ থেকে ১ হাজার মাটির ফুলের টব বা হাড়ি-পাতিল তৈরি করতে পারছি। বিদ্যুৎ খরচও কম লাগে। একটি মেশিনে মাসে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে।
প্রতিবন্ধী রুপ কুমার পাল (৩০) এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন ব্যবহার করে মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র অনায়াসে তৈরি করতে পারছেন। এ মেশিন ব্যবহারে সময় এবং শ্রম সাশ্রয়। পাশাপাশি উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৈদ্যুতিক চাক মেশিন উদ্ভাবক এস এম মজিবর রহমান জানান, এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিনটি দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারলে মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত কারিগরদের সময় ও শ্রম সাশ্রয় হবে এবং ৩ গুণ উৎপাদন বেশি হবে। ফলে মৃৎশিল্পরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবে। মৃৎশিল্পের উন্নয়নে মাটির মন্ড তৈরির মেশিন তৈরিতে মনোনিবেশ করেছেন বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সাহায্য-সহযোগিতা পেলে এ মেশিন বৃহৎ পরিসরে বাজারজাত করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ।