বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে ২৩তম বিশেষ বিসিএসে (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের জন্য সহকারী সার্জন হিসেবে নিয়োগের জন্য এ সুপারিশ করে।
ডা. সুমনা সরকার অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ২৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সুমনা সরকারের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক অমল কৃষ্ণ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে জটিলতার অভিযোগে পিএসসি সুমনার মৌখিক পরীক্ষা নেয়নি। তবে সুমনা সরকার হাল ছাড়েননি। আইনি লড়াইয়ে জিতেছেন তিনি।
দীর্ঘ ১৮ বছর পর আদালতের রায় অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সুমনা সরকারের পরীক্ষা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। সুমনা যে ছেলেকে পেটে নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন, সেই ছেলে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সুমনা সরকারের এই সাফল্য দেখে যেতে পারেননি চিকিৎসক বাবা অমল কৃষ্ণ সরকার। তিনি ২০১৮ সালে মারা গেছেন। সুমনা বলেন, ‘বাবা আমাকে পরীক্ষা দিতে পরীক্ষার হলে পৌঁছে দিতেন। পরে আইনি লড়াইয়েও পাশে ছিলেন। গত বছর আমার পক্ষে আদালতের রায় পেলাম, তত দিনে বাবা আর বেঁচে নেই।’সুমনা বর্তমানে চট্টগ্রামের লায়ন্স দাতব্য চক্ষু হাসপাতালে চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত।
২০০০ সালে পিএসসির নেওয়া ২৩তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষায় স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রার্থী ছিলেন সুমনা। ওই বছরের মার্চে প্রিলিমিনারি এবং এপ্রিলে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০০৩ সালের জুনে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে জটিলতার অভিযোগে চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা থেকে বাদ পড়েন তিনি।
সুমনার শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রামে। সুমনা সরকার বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন ২০০৯ সালে। ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর মামলার রায় হয়। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল করে পিএসসি। আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে দেন। পরে গত বছরের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি হলে পিএসসিকে অসমাপ্ত মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। চলতি বছরের ১ জুন সুমনা সরকার পিএসসির চেয়ারম্যান বরাবর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। ৩০ জুন পিএসসি সচিবালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) নুর আহমদের সই করা চিঠিতে সুমনাকে জানানো হয়েছে, রায় বাস্তবায়নে সুমনার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নেয় কমিশন। মৌখিক পরীক্ষার পরই সুমনাকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে পিএসসি।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত ২৩তম বিসিএস (বিশেষ) স্বাস্থ্য ক্যাডারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে অংশগ্রহণ করে সুমনা প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করেন। কিন্তু ওই সময় মুক্তিযোদ্ধার সনদ সংক্রান্ত জটিলতার কারণ দেখিয়ে সুমনাসহ অনেক পরীক্ষার্থীর মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষার কার্ড ইস্যু করা হয়নি। পরে তারা ভাইভা পরীক্ষা দিতে পারেননি।
এরপর ২০০১ সালে মৌখিক পরীক্ষা দিতে গেলে সুমনার ভাইভা পরীক্ষা নেয়া হয়নি। এরপর ২০০৩ সালে তাদের মধ্যে থেকে ১২ জন হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট তাদের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। পরে তারা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পান। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে সুমনা হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৫ সালে সুমনার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল করে পিএসসি। ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের রায়টি স্থগিত করেন। এরপর দীর্ঘদিন মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। গত বছর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ উত্তীর্ণ সুমনা সরকারকে মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষা গ্রহণের আদেশ দেন।