গত ১৭ সেপ্টেম্বর লন্ডনে খুন হন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিক্ষিকা সাবিনা নেসা।
নিহত সাবিনা নেসা (২৮) দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের লিউশামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার দাওরাই গ্রামে।
১৭ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে সাবিনা নেসা গ্রিনউইচের বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। তিনি পাঁচ মিনিট দূরত্বের পেগলের স্কয়ারে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। পরদিন নিকটবর্তী কিডব্রুক এলাকার একটি পার্কের ভেতরে তাঁর লাশ পাওয়া যায়।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গতকাল রোববার একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। তাঁর আগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তদন্তের আওতায় রেখে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের খবর ব্রিটিশ মিডিয়ায় শুরুতে অতটা গুরুত্ব পায়নি। এক সপ্তাহের মাথায় গত বৃহস্পতিবার সাবিনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন অনলাইনে প্রধান প্রতিবেদন করা হয়। এর মধ্যে বিবিসি, গার্ডিয়ান, রয়টার্সসহ অন্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোও গুরুত্ব দিয়ে এ খবর প্রকাশ করে।
গতকাল সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনের কেন্দ্রস্থল থেকে ২০ মিনিটের মতো ট্রেনের দূরত্বের কিডব্রুক এলাকার বাসিন্দারা তাঁদের কমিউনিটিতে এ হত্যাকাণ্ডে গভীরভাবে বেদনাহত হয়েছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সাবিনার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কিডব্রুকে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। সেখান থেকে লন্ডনের রাস্তায় নারী ও কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা জোরদারের আহ্বান জানানো হয়। ওই কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে সাবিনার বোন জেবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘সাবিনা পরিবারকে ভালোবাসত। আমরা আমাদের বোনকে হারিয়েছি। আমার মা-বাবা তাঁদের মেয়েকে হারিয়েছেন। আর আমার মেয়েরা হারিয়েছে দারুণ একজন মেধাবী ও মমতাময়ী খালাকে।’ তিনি বলেন, ‘কেবলই মনে হচ্ছে, আমরা একটি দুঃস্বপ্নের মধ্যে আটকে আছি এবং সেখান থেকে বের হতে পারছি না।’
তবে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সোশ্যাল মিডিয়ার অনেকেই তার হত্যাকাণ্ডের খবরকে তুলনা করেছেন কয়েক মাস আগে লন্ডনে একই ধরণের ঘটনার শিকার হওয়া এক শ্বেতাঙ্গ নারী সারা এভারার্ডের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে।
চলতি বছরের মার্চে দক্ষিণ লন্ডনে সারা এভারার্ড খুন হন। সারাও সেদিন রাতে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন, পথে তাকে অপহরণ করে এক পুলিশ, পরে তার লাশ পাওয়া যায় একটি পার্কে।
সারার এই হত্যাকাণ্ড ব্রিটেনকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয়। দিনের পর দিন এই হত্যাকাণ্ডের খবর ব্রিটিশ গণমাধ্যমের শিরোনাম দখল করে রেখেছিল। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং ঘরের বাইরে নারীর নিরাপত্তার দাবিতে যে বড় বড় বিক্ষোভ হয়, তাতে এমনটি ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটনও যোগ দিয়েছিলেন।
কিন্তু সাবিনা নেসার হত্যাকাণ্ডের পর অন্তত প্রথম কয়েকদিন ব্রিটিশ গণমাধ্যমে সে রকম কভারেজ দেখা যায়নি বলে অনেকে অভিযোগ করছেন।
এ ব্যাপারে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের একজন কাউন্সিলর রাবিনা খান বিবিসি রেডিও ফোরের টুডে অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন অনেক পোস্ট তিনি দেখেছেন, যেখানে অনেকে প্রশ্ন করছেন, একজন অশ্বেতাঙ্গ নারী বা সংখ্যালঘু নারী যদি সারা এভারার্ডের মতো নিখোঁজ হয়ে যান, তিনি কি আসলে মিডিয়ায় একই ধরণের মনোযোগ পাবেন? এদিকে, সাবিনা নেসার হত্যাকাণ্ড একই সঙ্গে নতুন করে ঘরের বাইরে নারীর নিরাপত্তার প্রশ্নটি সামনে নিয়ে এসেছে।
মরিয়ম চৌধুরী -মিশিগান প্রতিদিন