কবিঃ জাকির আবু জাফর
জামা ভাঁজ করার কৌশল এঁকে মা বললেন – এমন করেই ভাঁজ করে নিতে হয় জীবনের দুঃখগুলো
ভাঁজের চাতুর্য শিখতে শিখতে আমি শিখে গেলাম
কীভাবে একাই ভাঁজ করে নিতে হয় পথের বন্ধুর
আমি সুখ ভাঁজ করার নিদান খুলে বরাবরই অপলক
মা আমার দৃষ্টি ভাঁজ করে রেখে দিলেন কৈশোরের তাকে
বললেন – যখন ইচ্ছে খুলে দেখিস নিষ্পাপ এই চোখের নদী
সহসাই নদীগুলো ভাঁজ করে রেখে দিলাম বুকের ভেতর
তারপর ঢেউয়ের পৃষ্ঠাগুলো সেলাই করে দেখি-
কীভাবে এক মলাটে বন্দি – জলের অভিধান
জল থেকে চরাচর আমার মুহূর্মুহু পাঠের আয়াত
ঘাসের অক্ষর থেকে পাতার নকশা
সবুজ শরবত থেকে ভোমরের চুম্বন
পাঁপড়ির ঠোঁট ও বৃক্ষের ধ্যান
এসব দরবেশী মাকাম আমার নিত্যতায় চোখা
ফসলের ছায়া ছেঁকে ভাঁজ করি ধানের কম্পন
আমার রোদ ও ছায়ার ফাঁকে থৈথৈ বৃষ্টির ঘ্রাণ
মৌমাছির গুঞ্জন ভাঁজ করে পাঠ করি মৌচাকের লিপি
রাতগ্রন্থ পাঠ করে জেনে গেছি অঘুমো চোখের বিধি
জেনে গেছি শিউলির শ্বাস থেকে মুদ্রিত গন্ধের হরফ
জোছনায় টুপটাপ শিশিরের কেরাত শুনে ভাঁজ করি ভোরের নিশ্বাস
আমার আমিকে ভাঁজ করার কায়দা এখন দুর্দান্ত
যখন সবাই ভাঁজ করে ক্ষমতার উত্তাপ
সকলেই ভাঁজ করে খ্যাতির তৃষ্ণা
হৃদয় কাটার ছোরাটি শাণিয়ে সবাই যখন সন্তর্পণ
আমি একাকীই ভাঁজ করি মানুষের মানচিত্র
পরতে পরতে আস্ত জীবনটি ঘেঁটে দেখি
সুখের নেশায় কেবল দুঃখই ভাঁজ করে মানুষ!