লেখকঃ জাকারিয়া ডন
প্রায় ত্রিশ বছর পর প্রথম ছাপানো “মরুপ্রান্তে” বইটি দেখতে পেলাম। যার প্রচ্ছদটাও আমার হাতে আঁকানো ছিল। ছাত্র জীবনে লিখা এটিই আমার প্রথম প্রকাশিত প্রেমের একটি উপন্যাস, যা ভীষণভাবে নাড়া দিয়ে গিয়েছিল সেই সময়ের তরুণ-তরুণীদের মাঝে।
মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে উপন্যাসটি লিখা শুরু করেছিলাম, শেষ করেছিলাম ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষা শেষ করে। সেই সময় বগুড়ার সাহিত্য কুটিরের প্রকাশক জিয়া ভাই পান্ডুলিপি পড়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে ছাপানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
প্রকাশ হলো ১৯৮৮ সালে। সাড়া পড়ে গেল তরুণ সমাজে। শুনেছিলাম সেই সময় জয়পুরহাটের গার্লস স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে উপহার হিসাবে দেবার জন্যে মরুপ্রান্তে বইটিই টিচাররা নির্বাচন করেছিলেন । যারা আমার ঠিকানা জানতেন তারা দূর দূরান্ত থেকে চিঠি লিখে অভিবাদন জানাতেন। একজন বইটা পড়ে ফেললে সার্কেলের বাকিরা বইটি না পড়ে থাকতে পারত না।
বইটির দ্বিতীয় প্রকাশ হয়েছিল ২০০০ইং সালে। সেই বছরে কয়েকবারে ৩০০০ কপি বই ছাপানো হয়েছিল। তারপরেও বিভিন্ন লাইব্রেরী থেকে বইটির জন্য ফোন আসত। কিন্তু পরে বইটির যোগান দেয়া সম্ভব হয়নি। পূবালী ব্যাংকের এক জৈষ্ঠ ব্যবস্থাপক আমার অবস্থান জানতে পেরে অফিসে এসেছিলেন দেখা করতে। তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে অনেকগুলি বই তার কলিগদের মাঝে বিতরণ করেছিলেন এবং আমার জন্যে তার বাড়িতে বিশেষ ডিনারের আয়োজন করেছিলেন। তখন বুঝতে পেরেছিলাম, বইটি বয়স্ক মানুষেরও ভালোলাগার খোরাক হতে পারে।
মাত্র সেদিন এক মহিলা ব্যাংকারের সাথে পরিচয় হলো, তিনি অবাক বিস্ময়ে জানতে চাইলেন, আপনিই কী মরুপ্রান্তের রাইটার? তিনি আরো জানালেন, এই বইটির প্রেম কাহিনী আজো তার মনে স্বপ্নের মতো ভেসে বেড়ায়।
সবচেয়ে ভালো লাগল এই প্রজন্মের তরুণ ছেলে জুহাইরের মুখে এক গল্প শুনে। তারা অনেকে একসাথে ঢাকা যাচ্ছিল। রেস্টুরেন্টে বসে এক তরুণী তার ব্যাগ থেকে মরুপ্রান্তে বইটি উঁচিয়ে ধরে জানাল, কখনো সুযোগ পেলে “মরুপ্রান্তে” পড়তে।’ জুহাইরের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সে জানালো, “বইটি তার বাড়ির লাইব্রেরীতে ছিল।”
কয়েকদিন হলো আমার ভার্সিটি পড়ুয়া ভাগ্নে-ভাগ্নি, ছেলে মেয়ে সকলেই অনুরোধ করে যাচ্ছে, নতুন নতুন লিখা যখন বেরুচ্ছেই তখন “মরুপ্রান্তে” উপন্যাসটি আবার মূদ্রিত হোক না।” তাদের বিশ্বাস যতই সেল ফোন হাতে থাকুক, শিক্ষিত তরুণ সমাজে আবারো মরুপ্রান্তের প্রেম কাহিনী দারুণ ভাবে সাড়া জাগাতে পারবে, ঠিক আগের মতোই।
হুম, আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বইটির তৃতীয় মূদ্রণ করব। যত জলদি সম্ভব, করব। পাঠক-পাঠিকা হয়তো আরো কমে যাবে, তবু থাকুক না আমার কোনো বই এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সেল ফোনের পাশে। কখনো মন চাইলে তারা খানিক পাতা উল্টাবে!!