মিশিগান প্রতিদিন ডেস্কঃ এই প্রথমবার শূকরের হৃৎপিণ্ডে জিনগত বদল করে মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আশ্চর্যজনক এবং যুগান্তকারী সাফল্য তো বটেই। অনেকদিন ধরে এই নিয়ে চিকিৎসকরা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে আসছিলেন। অনেক পরিশ্রমের পর এই প্রথমবার সেটা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে ৫৭ বছরের এক ব্যক্তির শরীরে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড মেডিসিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। ডেভিড বেনেট নামে এই ব্যক্তি ভাল আছেন। তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ডেভিডের হৃৎপিণ্ডে সমস্যা ছিল। শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না। ডেভিডের শারীরিক অবস্থা যেমন ছিল, তাতে করে প্রচলিত হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যেত না। সে জন্যেই শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটা না করলে ডেভিডকে বাঁচিয়ে রাখাই অসম্ভব হত।’ রোগী এখন সুস্থ, স্থিতিশীল আছেন।
মেরিল্যান্ড হাসপাতালের চিকিৎসকরা সোমবার জানান, উচ্চ পরীক্ষামূলক সার্জারির তিনদিন পরই রোগী এখন সুস্থ আছেন। সাফল্য তো এসেছে। তবে প্রাণীর অঙ্গ মানবদেহে প্রতিস্থাপন এই অপারেশন আদৌ কার্যকর কিনা সেটা এখনই বলা ঠিক হবে না কারণ এটা হলো দীর্ঘ বছরের প্রশ্ন যে প্রাণীর অঙ্গ মানুষের দেহে প্রতিস্থাপন করে জীবন বাঁচানো সম্ভব কিনা। যদিও প্রশ্ন, তবুও উত্তর তো কিছুটা হলেও পাওয়া গেল।
তবে এই প্রশ্নের কিছুটা উত্তর হয়ত পাওয়া গিয়েছে। মেরিল্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টার অফ ইউনিভার্সিটির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই প্রতিস্থাপন দেখিয়েছে, জিনগতভাবে পরিবর্তিত প্রাণীর একটি হৃদয় অবিলম্বে প্রত্যাখ্যান ছাড়া মানবদেহে কাজ করতে পারে।
জানা যায়, ডেভিড বেনেট কয়েকদিন ধরেই হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন। সমস্যা দূর করার জন্য মেরিল্যান্ড হাসপাতালের চিকিৎসকরা চেষ্টা করেন। কিন্তু সবটাই বিফল হয়। কোনও ফল না পাওয়ায় ডেভিড তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর মানুষের হৃদযন্ত্র নেওয়ার মতো অবস্থাও ছিল না। একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় ডেভিডের সামনে। তবে হাল ছাড়েননি তিনি।
ডেভিডের শারীরিক অবস্থা দেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গত ৩১ ডিসেম্বর জরুরি ভিত্তিতে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনে অনুমোদন দেয়। এবং অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি শুরু করে দেন চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচার করা হল। তবে ডেভিডকে বেশ কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসক বার্টলি গ্রিফিথ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘বহু মানুষ হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায়। তাঁদের জন্য কোনও মানুষের হৃৎপিণ্ড পাওয়া খুব সমস্যার। এত অঙ্গদাতা পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা এগোচ্ছি, তবে আমার আশা, বিশ্বে এই প্রথম মানবদেহে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন ভবিষ্যতে রোগীদের সামনে এক নতুন পথ খুলে দেবে।’