শনিবার, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মিষ্টভাষি রুজিনা ম্যাডাম

শিক্ষকের মনে স্থান করে নিতে একজন শিক্ষার্থীর যেমন ক্লাসের মেধাবী, নম্র, ভদ্র, বিনয়ী ও সচ্চরিত্রের অধিকারি হতে হয়। অপরদিকে ঠিক একজন শিক্ষককে তার ছাত্রদের মনে স্থান করে নিতে হতে হয় উত্তম চরিত্র ও সুমিষ্টভাষী, বন্ধুসুলভ এবং সহজে আপন করে নেওয়ার মতো গুণের অধিকারি। তবেই না সেই গুণাবলি মনে রাখে শিক্ষার্থীরা। তেমনি একজন শিক্ষিকা ছিলেন আমাদের আম্বরখানা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার শ্রদ্ধেয় রুজিনা ম্যাডাম।স্কুলের দু’একজন শিক্ষকা ছাড়া সবারই খেতাব ছিল। কেউ লিলিপুট, কেউ রেলগাড়ি কেউবা আবার টুনটুনি ইত্যাদি নামে ছাত্রীদের কাছে পরিচিত ছিলেন। তবে রুজিনা ম্যাডামের খেতাব দিতে আমরা সাহস পাইনি। তিনি ছিলেন উদার চেতা, কোমলমতি, মিষ্টভাষি অত্যন্ত শান্ত মেজাজের ম্যাডাম। যার কথা শুনলে আমাদের মন তুষ্ট হয়ে যেতো। মনের ভেতর জ্বলে উঠতো উৎসাহ অনুপ্রেরণার বাতি। একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো, শিক্ষার্থীদের ভেতর জগৎটা অন্তরদৃষ্টি দিয়ে দেখার সক্ষমতা। অর্থাৎ ছাত্রদের মনের কথা বোঝার ক্ষমতা। ছাত্রদের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে মূল্যয়নে আনার সক্ষমতা।এসব প্রতিটি গুণ ছিল রুজিনা ম্যাডামের মধ্যে। একজন আদর্শ শিক্ষকের কাছে স্কুলের সকল ছাত্রই নিজের সন্তানের মতো। বাবা-মায়ের কাছে যেমন সকল সন্তানই সমান, ঠিক একজন আদর্শ শিক্ষকের কাছেও তেমনটাই। বাবা মা যেমন করে সন্তানের ভালো কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠে আদর সোহাগে জড়িয়ে নেন কোলে। অন্যায় পেলে শাসন করেন। আবার সন্তানের অভিমান ধুলোয় মিশিয়ে মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একজন শিক্ষকের মাঝে যে ছাত্ররা তাদের ভবিষ্যতের উজ্জল নক্ষত্রকে দেখতে পায় তারাই জীবনে জেগে উঠে বিজলির মতো। আর যারা সেটা দেখতে ব্যর্থ হয়, তারা ঝরা ফুলের মতো ঝরে পড়ে নিরবে নিঃশব্দে। গাছের তলায় পড়ে থেকে শুকিয়ে মিশে যায় মাটির সঙ্গে।একজন ছাত্রকে যেমন তার শিক্ষকের মাঝে খুঁজে নিতে হবে ভবিষ্যৎ পথ চলার দিকনির্দেশনা ঠিক তেমনি একজন আদর্শ শিক্ষকের আদর্শটা হতে হবে তিনি শিক্ষার্থীদের কতটা সহজভাবে আয়না হয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দেখাতে পারলেন। আজ এই যে বাংলা ভাষার ম্যাডামকে নিয়ে লিখছি সেটা তার প্রমাণ। মানুষ গড়ার কারখানা হল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। বাবা মা সন্তান-সন্ততি জন্ম দিতে পারেন, লালন পালন করতে পারেন। নিজের সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলার স্বপ্ন দেখতে পারেন। কিন্তু একজন শিক্ষক বাবা ও মায়ের সেই সন্তানকে গড়ে তোলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি মানুষ গড়বার কারখানা হয়ে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে শিক্ষকরা সেই কারখানার কারিগর। প্রতিটি ছাত্রের কাছে একজন শিক্ষক হলেন আয়নার মতো। শিক্ষকরা হলেন এমন এক আয়না যার সামনে দাঁড়ালে দেখা যায় অদূর ভবিষ্যতের ভাগ্যাকাশে জ্বলতে থাকা কোনো উজ্জ্বল নক্ষত্রকে।

                  ফারজানা চৌধুরী পাপড়ি 

 

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১