কবিঃ আফতাব মল্লিক
মা, কাল সকালে তুমি আর আমাকে ডেকে বোলো না,
“অ্যাই বুল্টি, কাপটা একটু ধুয়ে নিয়ে আয় তো । তোর বাবাকে চা দেবো”!
আমি কিন্তু কালকে তোমাদের মেয়ে থাকবো না। অন্য বাড়ির বৌ হয়ে যাবো।
একটু বেলা হলে ,বাবা যখন বলবে –
” মামনি, আমার চশমাটা নিয়ে আয় তো। আজকের পেপারটা কি দিয়ে গেছে” ?
তুমি পেপার আর চশমাটা নিয়ে, আস্তে আস্তে বাবার সামনে গিয়ে বোলো-
” বুল্টি নেই “! তোমার চশমা। আর এই যে পেপার!”
বাবা তখন অবাক হয়ে এক দৃষ্টিতে তোমার দিকে চেয়ে থাকবে!
চোখের কোণে গড়িয়ে পড়া জলের ফোঁটাটা- মাটিতে পড়ার আগেই তুমি আঁচল দিয়ে মুছে দিও কিন্তু।
আর বোলো, “এই তো কদিন পরে চলে আসবে তোমার মেয়ে। চিন্তা করো না”।
কাল সকালেও আমাদের জমির কোল ঘেঁষে সূর্য উঠবে!
যে মাছরাঙাটা প্রতিদিন আমাদের পুকুরের উত্তর দিকের পাড়ে-
নুয়ে থাকা পেয়ারা ডালে বসে, এক ভাবে জলের দিকে চেয়ে থাকে –
সেও এসে বসবে ঠিক একই ভাবে!
কাল সকালেও আমাদের উঠোনে –
মুরগির বাচ্চাগুলো একটা মরা আরশোলা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করবে!
তোমরা সবাই দেখতে পাবে। দেখতে পাবো না শুধু আমি !
দুপুর বেলায় দাদা এসে যখন বলবে-
“অ্যাই বুল্টি, আমার গোলাপী জামাটা আয়রন করেছিস?
“তোকে না বলে গেলাম। এর মধ্যেই ভুলে গেলি” ?
তুমি দাদার সামনে গিয়ে বোলো-
“আলমারি থেকে অন্য একটা জামা নিয়ে পরে নে”!
বেচারাকে মনে করিও না, আমি নেই !
বিকেলে চা করতে করতে তুমি আবার বোলো না-
“অ্যাই বুল্টি, জামা কাপড়গুলো বাইরে থেকে তুলে নে”।
“দেখছিস না পশ্চিম দিকে কত মেঘ করেছে ?”
আর যদি মাম্পি, শিপ্রা, পিঙ্কিরা এসে বলে-
“কাকিমা, বুল্টিকে একটু ডেকে দাও তো।” পুকুর পাড়ে গিয়ে বসবো”।
তুমিই না হয় খানিক গল্প কোরো ওদের সঙ্গে।
আমার যে আর কোনোদিন পুকুর পাড়ে যাওয়া হবে না!
আর ,গেলেও কারো অনুমতি নিয়ে যেতে হবে!
চোখের জল মোছো মা। দেখো দুদিন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে!
বাবা কোথায় ? খাবার পরে বাবার ঔষধগুলো মনে করে দিও প্রতিদিন।
আর গরম জল করে স্টিলের ছোট টিফিনটাতে ভরে-
দাদার খাটের তলায় রেখে দিও রাতের বেলা।
দাদুর জামা কাপড়গুলো সব বের করে রোদে দিও দিন।
আর আসতে হবে না। যাও মা। ঘরে গিয়ে বাবাকে একটু সান্ত্বনা দাও।
আমার সুখ নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না। সুখের কথা মেয়েদের ভাবতে নেই !
শুধু তোমরা ভালো থেকো।
তাহলেই আমি হাজার কষ্টের মধ্যেও ভালো থাকবো !