মিশিগানের সিটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ইতিহাস গড়লেন ইয়েমেনী বংশোদ্ভূত আমির গালীব ও আবদুল্লাহ হাম্মুদ।মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) মিশিগানের অন্যান্য সিটির মত হ্যামট্রামেক ও ডিয়ারবোর্ন সিটিতেও ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে আমির গালীব ও আবদুল্লাহ হাম্মুদ হ্যামট্রামেক ও ডিয়ারবোর্ন সিটি নির্বাচনে প্রথম ইয়েমেনী বংশোদ্ভূত মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
আমির গালীব ৩ হাজার ২৩২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, যা মোট ভোটের ৬৮শতাংশ। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পোলিশ বংশোদ্ভূত কারেন মাজেউস্কি পেয়েছেন ১ হাজার ৪৮৫ ভোট যা মোট ভোটের ৩১ শতাংশ।শহর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ১০০ বছরে, হ্যামট্রামেক ইউরোপীয় অভিবাসী সম্প্রদায় থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত বাসিন্দাদের আবাসস্থলে রূপান্তরিত হয়েছে। সিটি কাউন্সিলে এর চিত্র চোখে পড়লেও মেয়র পদে তা দেখা মেলেনি। তবে গত ২ নভেম্বর (মঙ্গলবার) এই চিত্রেও পরিবর্তন এসেছে। এবং প্রথমবারের মতো একজন ইয়েমেনী মেয়র শহরের নেতৃত্ব দেবেন। নির্বাচনে জয়ের পর এক বিবৃতিতে আমির গালিব হ্যামট্রামেকবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, জনগণ তাকে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করায় তিনি অত্যন্ত ‘আনন্দিত ও গর্বিত’। তিনি বলেন, “ইয়েমেন থেকে ১৭ বছর বয়সে এখানে এসে গাড়ীর প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করেছি। কাজের সাথে লেখাপড়া চালিয়ে জীববিজ্ঞানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য/নার্সিং বিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করি। এবং এখন একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে কাজ করছি। আজ আপনাদের ভালোবাসায় আপনাদেরকে সেবা করার সম্মান এবং সুযোগ পেয়েছি।” বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমরা সবাই সিটিকে এমনভাবে গড়ে তুলব-যেন সিটির প্রত্যেক বাসিন্দা খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান ও ন্যায়সঙ্গত শিক্ষার সুযোগ পায়। কিন্তু আমাদের এই পরিকল্পনা তখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, যখন সবাই এগিয়ে আসবেন। সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ ব্যতীত হ্যামট্রামেককে একটি আদর্শ শহর হিসেবে গড়ে তোলার কাজটি অসম্ভব কঠিন হবে।” গালিব একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার এবং ইয়েমেনি অভিবাসী ও রাজনীতিতে নবাগত। ৪১ বছর বয়সী গালিব বলেছেন যে তিনি অবকাঠামোগত উন্নতি এবং সীসামুক্ত পানি সরবরাহে পরিষেবা লাইনের আধুনিকায়নসহ শহরের চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলায় নতুন পদ্ধতি আনতে চেষ্টা করবেন তিনি বলেন, “আমার স্নাতক এবং মেডিকেল স্কুলে আমার শিক্ষাগত অভিজ্ঞতা আছে এবং আমি সম্প্রদায়ের সেবক নেতা হওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত এবং প্রস্তুত ছিলাম।” তিনি আরো বলেন, “আমি সম্প্রদায়ের জন্য একটি ইতিবাচক এবং রূপান্তরমূলক পরিবর্তন তৈরি করতে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো।“ মানুষের উপর পড়া প্রভাব আমার উপরও পড়ে উল্লেখ করে গালিব বলেন, হ্যামট্রামেকের লোকেরা নিজেদের বিচ্ছিন্নবোধ করেন এবং আমি স্থানীয় সরকার এবং জনগণের মধ্যে সেই শূন্যতা পূরণ করতে এবং পরিবর্তনটি ঘটানোর জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলাম।আপনাদের মনের আশা পুরন করবো ইনশাআল্লাহ।” তিনি বলেন, “আমি জনগণকে একত্রিত করব এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে ও স্থানীয় সরকারের সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করবো।”
এমন একটি শহরে গালিবের জয় ভূমিকম্পের মতো আঘাত করেছে। কারণ ২০০০ এর দশক পর্যন্ত এশিয়ান বা মুসলিম কাউন্সিলের সদস্য ছিল না। অথচ গত দশকে এই দৃশ্যে পরিবর্তন আসছে। সংখ্যাগরিষ্ঠরা সংখ্যালঘু হয়ে উঠেছে। শহরটিতে এখন ৪১% এরও বেশি বিদেশি বংশোদ্ভুত জনসংখ্যা রয়েছে যা গর্বের বিষয়। আদমশুমারির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৬৯% বাড়িতে ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলা হয়।
অন্যদিকে স্টেট রিপাবলিক আবদুল্লাহ হাম্মুদ ডিয়ারবর্নের সপ্তম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ও আমির গালিবের মত ইয়েমেনী বংশোদ্ভূত এবং ডিয়ারবোর্ন মধ্যে প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাক্তন স্থানীয় কর্মকর্তা গ্যারি ওরোনচ্যাককে পরাজিত করেছেন। গ্যারি ওরোনচ্যাককের ভোট ছিল ৪৫ শতাংশ। আদমশুমারি অনুসারে ওয়েন কাউন্টি সম্প্রদায়ের প্রায় ৪৭ শতাংশ বাসিন্দা ইয়েমেনী হিসাবে চিহ্নিত এবং ২৯.১ শতাংশ বিদেশী বংশোদ্ভূত। নির্বাচনে জয়ের পর এক বিবৃতিতে আবদুল্লাহ হাম্মুদ বলেন, যেসব অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদেরকে তাদের বিশ্বাস বা জাতিগততার জন্য উপহাস করা হয়েছে, আমাদের মধ্যে যাদের নাম অনাকাঙ্খিত বলে মনে করা হয়েছে, এবং ভাঙা ইংরেজি ভাষায় কথা বলার জন্য আমাদের মা – বাবারা অন্যদের কাছে অপমানিত হয়েছেন, আজ প্রমাণ হলো যে আমরাও অন্যদের মতোই আমেরিকান।” এদিকে মিশিগানের হ্যামট্রামেক ও ডিয়ারবোর্ন সিটি নির্বাচনে এই প্রথমবারের মত দুই মেয়র পুরুষের ঐতিহাসিক বিজয়ে নগরের ইয়েমেনী অধ্যুষিত এলাকা হ্যামট্রামেক, ডিয়ারবর্ন ও ডিয়ারবর্ন হাইটসয়ের বসবাসরত ইয়েমেনী কমিউনিটির মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। দুজনেরই নিজ দলের বাইরেও কমিউনিটিতে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য কমিউনিটি এবং ধর্ম-বর্ণের মানুষের সঙ্গে রয়েছে সুসম্পর্ক। তাই ইয়েমেনীসহ অন্যান্য দেশের মানুষের ভোটও পেয়েছেন বলে কমিউনিটির সাধারণ মানুষদের বক্তব্যে উঠে এসেছে।
নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শাহানা হানিফ ও সিভিল কোর্টের বিচারক অ্যাটর্নি সোমা সাঈদ কুইন্স। বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এই দুই নারী।
মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) নিউইয়র্ক সিটিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে শাহানা হানিফ নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং প্রথম মুসলিম নারী কাউন্সিলওমেন নির্বাচিত হয়েছেন। তার পৈত্রিক নিবাস চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানায়। তিনি ব্রুকলিনের নির্বাচনী এলাকা ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ থেকে ২৮ হাজার ২৫২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, যা মোট ভোটের ৮৯.৩ শতাংশ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী ব্রেট ওয়েনকফ পেয়েছেন মাত্র ২ হাজার ৫২২ ভোট যা মোট ভোটের ৮ শতাংশ।
অন্যদিকে অ্যাটর্নি সোমা সাঈদ কুইন্স সিভিল কোর্টের বিচারক হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম মুসলিম নারী বিচারক। তার পৈত্রিক নিবাস টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলা।
নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনে এই প্রথমবারের মত দুই বাংলাদেশি নারীর ঐতিহাসিক বিজয়ে নগরের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা কুইন্সের জ্যাকসন হাইটস, ওজোনপার্ক, জ্যামাইকা, এস্টোরিয়া, ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার, স্টারলিংক, ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ডে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। দুজনেরই নিজ দলের বাইরেও কমিউনিটিতে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য কমিউনিটি এবং ধর্ম-বর্ণের মানুষের সঙ্গে রয়েছে সুসম্পর্ক। তাই বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের মানুষের ভোটও পেয়েছেন বলে কমিউনিটির সাধারণ মানুষদের বক্তব্যে উঠে এসেছে। এ নির্বাচনে একাধিক বাংলাদেশি প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ডিস্ট্রিক্ট-২৪ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিব রহমান এবং ডিস্ট্রিক্ট-২৫ থেকে রিপাবলিকান প্রার্থী শাহ শহীদুল হক। এর আগে এই দুই বাংলাদেশ নারী এ বছর ২২ জুন অনুষ্ঠিতব্য প্রাইমারি নির্বাচনে নিজ দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে বিজয়ী হয়ে সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী হন।