নারীদের বিশেষ কিছু শারীরিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বরকতের মাসে যখন তারা এই অসুবিধার সম্মুখীন হন, অনেকে চাপা কষ্ট অনুভব করেন, হতাশ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ হয়ত ভাবেন, রোজার সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে গেলাম। না, এতে রোজার সওয়াব নষ্ট হয় না। ইসলাম এমন অবকাশ রাখেনি যে, একটি বৈধ কারণে সওয়াব নষ্ট হয়ে যাবে। বরং, ওই দিনগুলোতে ইবাদত না করেও ইবাদতের সমান সওয়াব পাওয়া যাবে বলে হাদিস রয়েছে। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কেউ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে তেমন সওয়াবই পাবে, যেমনটা সে সুস্থ অবস্থায় বা সফরে না থাকা অবস্থায় পেতো।’ (বুখারি: ২৯৯৬)
নারীদের পিরিয়ড বা অন্য অসুস্থতার ক্ষেত্রে একই বিধান প্রযোজ্য। কারণ, একটি বৈধ কারণেই তারা রোজা রাখতে অপারগ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইবনে হাজার (রহ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো আমল এমনিতে করতো, কিন্তু সাধ্যাতীত হওয়ায় পারেনি, সে ব্যক্তির ক্ষেত্রে হাদিসটি প্রযোজ্য’।আরেকটি উদাহরণে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। একবার রাসুলুল্লাহ (স.) মদীনায় কয়েকজন সাহাবীকে রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সঙ্গে থাকা সাহাবীদের বললেন—তোমরা এমন এক পা-ও ফেলোনি এবং এমন কোনো উপত্যকাও অতিক্রম করোনি, যার সওয়াব আমাদের সঙ্গে যোগ না দেওয়া ব্যক্তিরা পাবে না। (অর্থাৎ তারা আমাদের সঙ্গে যোগ না দিয়েও আমাদের মতোই সওয়াব পাবে।) কারণ, তারা একটি বৈধ কারণে আসতে পারেনি।
এতে প্রমাণিত হয়, কোনো বৈধ কারণে ইবাদত ছুটে গেলে, সেই ইবাদতের পুরো সওয়াব দেওয়া হয়। সুতরাং রমজানের রোজার বরকত নিয়ে নারীদের হতাশ হবার কারণ নেই। আল্লাহর নির্দেশপালনে আন্তরিকতা, ভয় ও একনিষ্ঠতা থাকলে যথাযথ প্রতিদান পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।রাসুলুল্লাহ (স.) একবার হজে যাবার সময় মক্কার কাছাকাছি অবস্থিত সারিফ নামক জায়গায় থামলেন। এসময় তিনি দেখলেন, হজরত আয়েশা (রা.) কাঁদছেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছে’? আয়েশা (রা.) জবাব দিলেন, ‘আমি যদি এবছর হজ না করতাম!’ সঙ্গে-সঙ্গেই রাসুলুল্লাহ (স.) বুঝে গেলেন। বললেন, ‘সম্ভবত তোমার হায়েজ শুরু হয়েছে।’ আয়েশা (রা.) জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ’। রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘এই ব্যাপারটি আল্লাহ তাআলা সকল আদম কন্যার জন্য নির্ধারিত করেছেন’। সান্ত্বনা দেওয়ার পর তিনি এই অবস্থায় করণীয় কী, তা শিখিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, ‘হাজীরা যা করে, তুমিও তাই করবে। তবে পবিত্র হওয়ার আগ পর্যন্ত কাবার চারদিকে তাওয়াফ করবে না।’ (সহিহ বুখারি: ১/২২৩)
এই হাদিসেও বুঝা গেল- বৈধ কারণে ইবাদত-বন্দেগি করতে না পারলে হতাশার কারণ নেই। বরং ইসলামের হুকুম মেনে চলবে। সওয়াবের কমতি করা হবে না। স্রাবকালীন সময়ে একজন মুসলিম নারী হিসেবে রোজার সম্মানার্থে মানুষের সামনে খাওয়া-দাওয়া করবে না, আর দিনে ঋতুস্রাব বন্ধ হলে ইফতার পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু পরে এ রোজা কাজা আদায় করতে হবে। (আহসানুল ফতোয়া: ৪/৪২৮; আহসানুল ফতোয়া: ৪/৪২৮; বাহুরুর রায়েক: ২/২৯১)
উল্লেখ্য, রমজানে নারীরা বিশেষ কিছু আমলের দিকে মনোনিবেশ করবেন। যেমন—বাকসংযম, পর্দা ও শালীনতা, অহেতুক কাজ বর্জন, অপচয় রোধ ইত্যাদি। ঋতুকালীন সময়ে কোরআন তেলাওয়াত থেকে বিরত থাকবেন। তবে বিভিন্ন দোয়া-দরুদ, তাসবিহ-তাহলিল ও জিকির-আজকার করতে পারবে। এমনকি দোয়া হিসেবে আয়াতুল কুরসি ও কোরআনের বিভিন্ন আয়াত পাঠ করা যাবে। এতে সওয়াব পাওয়া যাবে। ওই সময়ে দোয়ার অর্থবহ আয়াত বা সুরা দোয়ার নিয়তে পড়া জায়েজ। যেমন দোয়ার নিয়তে আয়াতুল কুরসি বা সুরা নাস ও ফালাক ইত্যাদি পড়া জায়েজ হবে। (ফাতহুল কাদির: ১/১৬৮, রদ্দুল মুহতার: ১/১৭২, আহসানুল ফতোয়া: ২/৭১)