
রোজা শুরু হয়ে গেলেও রমজানের পণ্যের দাম বাড়ার গতি থামেনি। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) প্রথম রোজার দিনও বেগুনের দাম বাড়তে দেখা গেছে রাজধানীর বাজারে। কারওয়ান বাজারে বড় গোল বেগুন আগের দিনের চেয়ে কেজিতে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। শুধু বেগুন নয়, তরমুজের দামও গত কয়েক দিনের চেয়ে কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা, খাসির মাংসে বেড়েছে ১০০ টাকা। খেসারির ডালেরও সংকট দেখা গেছে। গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের দিন যে তরমুজের সর্বনিম্ন কেজি ছিল ৬০ টাকা, সেটি গতকাল বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকায়। ১১০০ টাকার খাসির মাংস গতকাল এক লাফে ১০০ টাকা বেড়ে ১২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। খিরার দামও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকা কেজি।
এদিকে সাধারণ মানের খেজুরের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অতি সাধারণ বা নিম্নমানের খেজুরের কেজি ১৫০-১৬৫, বহুল ব্যবহৃত জাইদি খেজুর ১৭০-১৮০ টাকা বিক্রি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে গতকাল কয়েকটি বাজার ঘুরে কোথাও এই দামে এসব খেজুর বিক্রি হতে দেখা যায়নি। বেশিরভাগ বাজারেই খেজুরের সর্বনিম্ন দাম দেখা গেছে ২৮০ টাকা।রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও তেজকুনিপাড়ার বিজয় সরণি বাজারে দেখা গেছে, বড় গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি। সোমবার এর দাম ছিল ৮০ টাকা। হাইব্রিড শসা ৫০-৬০, দেশি শসা মানভেদে ৮০-১০০ এবং খিরা ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা লিটার। খেসারির ডাল প্রতি কেজি ১৫০ টাকা বিক্রি হলেও বাজারে এই ডালের ঘাটতি দেখা গেছে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি। রমজানে শরবতের অন্যতম উপকরণ লেবুর দরও চড়া। ছোট লেবু বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৪০-৫০ টাকা। প্রতি হালি মধ্যমানের লেবু ৬০ ও বড় আকারের লেবু ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এসব লেবুর দাম এক দিনে অন্তত ১০ টাকা করে বেড়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন
প্রথম রমজান থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৮টি স্থানে ৪ প্রকারের মাছ বিক্রির কথা ছিল মৎস্য অধিদপ্তরের। সেখানে প্রতি কেজি রুই ২৪০, পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া ১৩০ এবং পাবদা ৩৩০ টাকায় বিক্রির কথা জানানো হয়। প্রতিদিন সকাল ১০টায় বিক্রি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল মিরপুর ১ নম্বরের ঈদগাহ মাঠে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো গাড়ি পৌঁছেনি। শুধু মিরপুর নয় সেগুনবাগিচা বাজার, মেরুল বাড্ডা বাজার, মুগদাপাড়ার মদিনাবাগ বাজার, যাত্রাবাড়ীর দয়াল ভরসা বাজার, মতিঝিলের বাংলাদেশে ব্যাংকের দক্ষিণ-পূর্ব কর্নার এবং পলাশী মোড়েও নির্ধারিত সময়ে দেখা যায়নি মাছের গাড়ি। শুধু খামার বাড়ির সামনে বঙ্গবন্ধু চত্বরে নির্ধারিত সময়ে মাছের গাড়ি পৌঁছে।
এ সম্পর্কে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীর বলেন, সোমবার মাছ বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছিল। আমাদের কথা ছিল প্রথম রমজান থেকে মাছ বিক্রি করা হবে। প্রথম রোজায় যানজটের কারণে অনেক স্থানে ভ্রাম্যমাণ গাড়ি পৌঁছতে পারেনি। এ ছাড়াও রাজধানীর ৩০টি স্থানে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র ২৫টি এবং স্থায়ী বাজার ৫টি। নির্ধারিত সময়েই এসব স্থান থেকে পণ্যগুলো কিনতে পেরেছেন ভোক্তারা।খলিলের দোকানে ৫৯৫ টাকায় মিলবে গরুর মাংস
রাজধানীর বাজারগুলোতে গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হলেও খিলগাঁওয়ের শাহজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান রমজানে ৫৯৫ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেছেন। গতকাল সকালে খলিল গোশত বিতানে সাশ্রয়ী মূল্যে গরুর মাংস বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
এ সময় খলিলুর রহমান বলেন, রমজানে ক্রেতাদের ৫০০ টাকায় মাংস খাওয়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গরুর দাম বেশি হওয়ায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। তাই ৫৯৫ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করছি। ২৫ রমজান পর্যন্ত এ মূল্যে বিক্রির কার্যক্রম চলবে। একজন ক্রেতা নির্ধারিত মূল্যে সর্বোচ্চ ৫ কেজি মাংস কিনতে পারবেন। এ ছাড়াও রাজধানীর আরও ৭টি স্থানে ছাড়কৃত মূল্যে পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম উদ্বোধন করেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি জানান, অনুমোদনের পরে দাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে নিজ দপ্তরে বাংলাদেশ-জাপান ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (ইপিএ) নিয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতে পেঁয়াজের শুল্ক বাংলাদেশের জন্য ৮০০ ডলার, আর যুক্তরাজ্যের জন্য ১ হাজার ২০০ ডলার। আমাদের সিনিয়র সেক্রেটারি তিন দিন ধরে দাম কমাতে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন, আলোচনা করছেন। দুয়েক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।