বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

লাল বেনারসি

কবিঃ আফতাব মল্লিক

মা,
তুমি চেয়েছিলে না তোমার মেয়ে সুখী হোক ?
সুখী আমি হয়েছি মা ।
এতো বড়ো বাড়ি,এ সি , ফ্রীজ, দামী গাড়ি, এমনকি শীতকালে জল গরম করার গীজার ও ।
সত্যি মা, আমার অনেক সুখ এদিক থেকে।
কিন্তু যে পাহাড় প্রমাণ কষ্ট আমার বুকে ,
তাকে আমি কোথায় রাখবো মা ?
যেখানে স্ত্রীর চেয়ে অফিস টাইপিষ্টের সঙ্গ,
একজন স্বামীর ধ্যান জ্ঞান ।।
যেখানে, স্ত্রী, সন্তান ফেলে অফিস ট্যুরের নামে, উদ্দাম জীবন একজন স্বামীর রুটিন হয়ে দাঁড়ায় ।
বলতে পারো মা কি সুখ আছে সেই স্ত্রীর কপালে ?
অফিস ফেরত স্বামীর যত্ন করার জন্য, তার আদর পাওয়ার জন্য, যখন একজন স্ত্রী,
একবুক আশা নিয়ে অপেক্ষা করে ।
আর তাকে উপেক্ষা করে যে স্বামী ল্যাপটপে বান্ধবীর উষ্ণ চ্যাটে নিজেকে তৃপ্ত করে ।
যেখানে সম্পর্ক শুধু গলার একটা সুতো আর কপালের লাল রঙ হয়ে মিথ্যে শোভা পায় ।
সেই সম্পর্কে কতো সুখ আছে মা বলতে পারো ?
হয়তো এটাই জীবন । আধুনিক জীবন ।
যেটা আমি শিখিনি মা, উচ্চ শিক্ষিতা না হওয়ার জন্য ।
কি করবো বলো ?
বড়ো হলে দেখতে খারাপ হয়ে যাবো বলে,
তোমরাই তো আমাকে এগারোয় পড়তে পড়তে বিয়ে দিয়ে দিলে ।
মাঝে মাঝে ভাবি মা, সব ছেড়ে ছুড়ে তোমাদের কাছে চলে যাই ।
কিন্তু যখন মনে পড়ে ,,,,!!!!
ফ্ল্যাট বাড়ির বৌ করার জন্য ,
পেনশনের বেশিরভাগ অংশ বিক্রি করে আর জমানো টাকা নিঃশ্বেষ করে, কিভাবে বাবা আমার এই সুখটা কিনেছিলো,
তখন তোমাদের কাছে গিয়ে তোমাদের বোঝা হয়ে,
তোমাদের শেষ জীবনের হাসি টুকু কেড়ে নেওয়ার সাহস হয় না মা ।
আর মরতেও পারিনা , এই নূপুরের কথা ভেবে ।
এই একরত্তি মেয়েটাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে,
মরেও যে আমি শান্তি পাবো না মা ।
কোনো মতে চলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নিয়েও আমি বেঁচে আছি মা।
আমার মতো অনেকেই বাঁচে এভাবেই ।
তাদের বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে ।
কিন্তু মা , যে সুখ সহশ্র কাঁটা হয়ে হৃদয় কে বিদ্ধ করে,
যে সুখ যন্ত্রণার আগুন হয়ে অন্তরকে ছারখার করে ,
সেই সুখ যেন কোনো বাবা মা তার মেয়ের জন্য না চায় মা।
এ অনুরোধ আমার মতো হাজার হাজার সুখে থাকা মেয়ের, মা ।
আমি আর কাঁদি না মা ।
শুধু, বিয়ের সময় তোমরা আমাকে যে লাল বেনারসি দিয়েছিলে!
তার প্রতিটি সুতোয় আমার সুখ খুঁজি আর সুখে থাকার ভান করি ।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১