জেমস নিশামের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে প্রথমে ১৮৫ রান করে জয়ের স্বপ্ন ভালোভাবেই দেখেছিল রংপুর রাইডার্স। তবে লিটন দাস ও তাওহীদ হৃদয়ের খুনে ব্যাটিংয়ে ম্লান হয়ে গেল নিশামের ইনিংস। বিপিএলের প্রথম কোয়ালিফায়ারে সাকিব আল হাসানের দলকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
এই ম্যাচে হেরে এখন দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের অপেক্ষা রংপুরের। সেখানে তামিম ইকবালের ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে খেলতে হবে সাকিবদের। সেই ম্যাচে যারা জিতবে তারাই কুমিল্লার বিপক্ষে খেলবে ফাইনাল, হারলেই বাদ।
রংপুরের দেওয়া ১৮৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি কুমিল্লার। ইনিংসের প্রথম বলেই ফজলহক ফারুকির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সুনীল নারাইন। এরপরই দেখা যায় তাওহীদ হৃদয়-লিটন দাস শো। লিটন একটু রয়েসয়ে খেললেও শুরু থেকেই মারকুটে ছিলেন তিনে নামা হৃদয়। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার থেকে আসে ৬১ রান।
৩১ বলে নিজের অর্ধশতক পূর্ণ করেন হৃদয়। আর কুমিল্লা তাদের দলীয় শতক পূর্ণ করে ১০ ওভার ৩ বলে। অর্থাৎ, শেষ ৫৭ বলে দরকার ছিল ৮৬ রান। কিছুক্ষণ পর ৩৮ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন আস্তে আস্তে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসা লিটন। দলীয় ১৪৩ রানে ভাঙে তাদের জুটি। মাত্র ৮৯ বলে এই রান যোগ করেন তারা। এই সময়ে ৬৪ রান করে ফেরেন হৃদয়। তার ৪৩ বলের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫টি চার ও ৪ ছক্কায়। এই ইনিংস দিয়ে এবারের বিপিএলে তামিমকে (৪৪৩*) ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহেও চূড়ায় পৌঁছালেন হৃদয় (৪৪৭*)।
তৃতীয় উইকেটে এরপর জনসন চার্লসকে নিয়ে এগোচ্ছিলেন লিটন। তবে ১৬১ রানের মাথায় চার্লসের বিদায়ের পর ১৭৩ রানের মাথায় ফেরেন লিটন। যদিও জয়ের সমীকরণ তখন অনেকটাই সহজ হয়ে আসে কুমিল্লার জন্য। ৫৭ বলে ৮৩ রান করেন কুমিল্লার অধিনায়ক লিটন। ৯টি চার ও ৪টি ছক্কায় সাজানো ছিল তার ইনিংস। শেষ পর্যন্ত দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন আন্দ্রে রাসেল (২*) ও মঈন আলী (১২*)।
এর আগে জেমস নিশামের শতক ছোঁয়া ইনিংসে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৫ রানের বড় সংগ্রহ পায় রংপুর রাইডার্স। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে এদিন শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে রংপুর। ২৭ রান তুলতেই ফেরেন শুরুর ৩ ব্যাটার শামীম হোসেন পাটোয়ারি, রনি তালুকদার ও সাকিব আল হাসান। ব্যাটিং অর্ডারে উন্নতি পেয়ে ওপেনিংয়ে নামা শামীম রানের খাতাই খুলতে পারেননি। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে আসে মাত্র ৩৫ রান।
এরপর প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে ওঠার চেষ্টা করেন শেখ মেহেদী হাসান ও জেমস নিশাম। তবে শুরুটা ভালো করলেও ইনিংস টেনে নিতে পারেননি মেহেদী। দলীয় ৬৬ রানে তিনি ফিরলে ভাঙে ৩৯ রানের জুটি। ১৭ বলে ২২ রান আসে মেহেদীর ব্যাট থেকে। তবে চার-ছক্কায় দারুণ খেলতে থাকেন নিশাম।
রংপুর তাদের দলীয় শতরান পূর্ণ করে ১২ ওভার ৫ বলে। এর পরপরই আউট হয়ে যান নিকোলাস পুরান। তার পরে দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকা নিশাম ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূর্ণ করেন ৩১ বলে। ষষ্ঠ উইকেটে তার সঙ্গে জুটি বাঁধেন নুরুল হাসান সোহান। রংপুর অধিনায়ক শুরুতে ধীরগতিতে খেললেও পরে চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি ফোটান। ১৯তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৫৭ রানের মাথায় সোহান ফিরলে ভাঙে জুটি। ততক্ষণে ৩৬ বলে যোগ হয় ৫৩ রান। ২৪ বলে ৪টি চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রান করেন সোহান। তবে ব্যাটে শেষ পর্যন্ত ঝড় বইয়ে দিয়েছেন নিশাম। ৪৯ বলে প্রায় দুইশ স্ট্রাইকরেটে ৯৭ রানে অপরাজিত থাকার ম্যাচে ৮টি চার ও ৭টি ছক্কা মেরেছেন তিনি। তাতে ১৮৫ রানের বড় সংগ্রহই পায় দল।
কুমিল্লার হয়ে দুর্দান্ত বল করেন সুনীল নারাইন। একটি উইকেট নিলেও ৪ ওভারে মাত্র ১১ রান দেন এই ক্যারিবিয়ান। সমান ওভারে ৩৭ রান দেওয়া আন্দ্রে রাসেলের শিকার ২ উইকেট। একটি করে উইকেট নেন রোহানাত দৌলাহ বর্ষণ, তানভীর ইসলাম ও মুশফিক হাসান। তরুণ মুশফিক ৪ ওভারে রান দিয়েছেন ৭২।