গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক দিনে আরও দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে আদালতে। এর মধ্যে একটি ছাত্র হত্যার এবং অপরটি সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীকে অপহরণের অভিযোগে।
বুধবার (১৪ আগস্ট) ঢাকার দুটি আদালতে পৃথক মামলা দুটি দায়ের করা হয়। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ নিয়ে দুই দিনে আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের হলো।
রাজধানীর কাফরুলে ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজনের (১৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (১৪ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহম্মেদ হুমায়ুন কবিরের আদালতে মামলার আবেদন করেন নিহত রাজনের ভাই রাজিব (৩২)। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে কাফরুল থানা পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য মইনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান কচি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজি মেজবাউল হক সাচ্ছু, সাবেক সংসদ সদস্য কামাল আহম্মেদ মজুমদার, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মানুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন, উত্তর সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ নেতা সালামত উল্লাহ সাগর, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সদস্য দীপংকর বাছার দীপ্ত। এছাড়া আওয়ামী লীগের আরও ৫০০-৬০০ নেতাকর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। অপর মামলাটি করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীকে অপহরণের অভিযোগে। এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিল সুমু চৌধুরী বুধবার (১৪ আগস্ট) বেলা সোয়া একটার দিকে এই আদেশ দেন। উত্তরা পশ্চিম থানাকে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক এবং র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। এছাড়া মামলায় র্যাবের ২০ থেকে ২৫ জন অজ্ঞাতপরিচয় সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা দাবি করেছেন, ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে উত্তরা এলাকা থেকে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে আটক করা হয়। পরে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নানা নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার পুলিশের গুলিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার মুদিদোকানি আবু সায়েদ নিহত হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী এ আদেশ দেন।