আস্থার সংকটের সঙ্গে দেশি-বিদেশি নানা সমস্যার কারণে দেশের শেয়ারবাজার এখন ক্রান্তিকালে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে নতুন করে করের বোঝা না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। মঙ্গলবার (২৮ মে) রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে প্রাক বাজেট নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু। এসময় তিনি আসন্ন অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেটে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ না করাসহ বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেছেন।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। করোনাকালীন একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সার্বিকভাবে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা তার প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়ে। ওই প্রেক্ষাপটে আমরা হয় তো পুঁজিবাজারকে ওইভাবে ঘুরে দাঁড় করাতে পারিনি বা ঘুরে দাঁড়ায়নি। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজার ক্রান্তিকালে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইনসেনটিভ না দিয়ে নতুন করের বোঝা চাপিয়ে বাজারের ওপর একটি নেগেটিভ মনোভাব সৃষ্টির প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। বাজার যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে, সে সময় সরকার বা এনবিআর আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজারের চেয়ারম্যান বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের মাধ্যমে পরিচালিত সিকিউরিটিজ লেনদেনের মূল্য পরিশোধকালে ০.০৫ শতাংশ হারে কর সংগ্রহ করে। এ করের হার আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম অনুশীলনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ কর কর্তনের হার হ্রাস করা প্রয়োজন। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এবং করোনা মহামারির প্রভাব বিবেচনা করে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ ধরনের করের হার ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন তিনি। এছাড়া ডিএসইর চেয়ারম্যান লিখিত আকারে বেশকিছু প্রস্তাব দেন। এগুলো হলো-শেয়ারবাজারের লেনদেনের মূল্যের ওপর টিডিএসের হার ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০২০ শতাংশ করা। উৎসে লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর সম্পূর্ণ এবং চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা এবং লভ্যাংশপ্রাপ্তির প্রথম পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত কর ছাড়।
লভ্যাংশ আয়ের ওপর উৎস করকে, সঞ্চয় পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর্তন করা করের ন্যায় চূড়ান্ত করদায় হিসেবে বিবেচনা করা। এখন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর হারে ৭.৫ শতাংশ ব্যবধান রয়েছে। এই ব্যবধান বাড়িয়ে ১০ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ করা সহ স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ লেনদেন থেকে মূলধনি মুনাফার ওপর নতুন করে কর আরোপ না করার প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই।
সংবাদ সম্মেলনে আরোও উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও, শরীফ আনোয়ার হোসেন, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাত্বিক আহমেদ শাহ, জিএম মো. সামিউল ইসলাম ও মোহাম্মদ আসাদুর রহমান প্রমুখ।
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার জাতীয় বাজেটে উত্থাপনের প্রস্তুতি চলছে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এটি বর্তমানে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট।