শনিবার, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সিলেটের সাংবাদিকতা ও রাজনীতির এক প্রবাদ পুরুষ মরহুম রজিউর রহমান

ফারজানা চৌধুরীঃ বাংলাদেশের প্রাচীনতম সংবাদপত্র সাপ্তাহিক যুগভেরীতে গিয়াসউদ্দিন আউয়াল দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এখনো সুদূর প্রবাস থেকে যুক্ত রয়েছেন। ডাকসাইটে সাংবাদিক সিলেটের প্রাণপুরুষ আমিনুর রশীদ চৌধুরীর মালিকানায় দেশের প্রাচীনতম সাপ্তাহিক যুগভেরী মর্যাদা সম্পন্ন পত্রিকা হিসেবে সমাদৃত। যুগভেরী নিয়ে তিনি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এই কাগজের প্রতি সাংবাদিক আউয়ালের রয়েছে অসীম আবেগ ও ভালোবাসা।

বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাসে কোনো কোনো ব্যক্তির নাম উজ্জ্বল হয়ে আছে। তারা এই পেশাকে দিয়েছেন অনন্য মর্যাদা। বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। মানুষের অধিকার, আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাদের কলম সোচ্চার ছিল। তেমনি একজন বিশিষ্ট সাংবাদিকের কথা “যুগভেরী” গ্রন্থে লিখেছেন, নব্বই দশকে সিলেটের দাপুটে লেখক-সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন আউয়াল।

মাওলানা রজিউর রহমান চৌধুরী সিলেট জেলার বালাগঞ্জের নিজ কুরুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতাকেও মহান পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম গঠিত সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের তিনি ছিলেন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

আমিনুর রশিদের মৃত্যুর পর যুগভেরি পরিচালনার ভার পুরোপুরিভাবে ন্যস্ত হয় আব্দুল মতিন চৌধুরীর উপর।১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে আব্দুল মতিন চৌধুরীর অনুরোধে রজিউর রহমান চৌধুরী যুগভেরী সম্পাদনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

মাওলানা রজিউর রহমান রহমান চৌধুরী ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দু’দফায় যুগভেরীর সম্পাদক ছিলেন। তাঁর এবং মহাম্মদ জহুর আলীর সম্পাদনাকালে যুগভেরী আলফারুক রূপে মুসলিম লীগের মুখপত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।এবং ৫২-র মহান ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতা করে।এ সময় কালে দেশের বিশিষ্ট প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ মাহমুদ আলী প্রতিষ্ঠা করেন সাপ্তাহিক “নওবেলাল”।

মাহমুদ আলী ও দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের যৌথ সম্পাদনায় সাপ্তাহিক পত্রিকাখানা ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে সিলেটসহ সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।আর আলফারুকের ছদ্মাবরনে যুগভেরীকে হতে হয় বিতর্কিত ও কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন।

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে রজিউর রহমান চৌধুরীর সম্পাদনায় প্রথম প্রকাশিত হয় মাসিক “প্রভাতী”। পরে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর সম্পাদনায় ইংরেজি “উইকলি নিউজ এজ” প্রকাশিত হয়।

পত্রিকাটি একবছর চলার পর বন্ধ হয়ে যায়। এর পূর্বে রজিউর রহমান চৌধুরী ও শামসুল হোসেন খানের যৌথ সম্পাদনায় ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক “জীবন”। এই পত্রিকাটি মাত্র তিন বছর চলার পর বন্ধ হয়ে যায়। একই সময়ে রজিউর রহমান চৌধুরী “দৈনিক ইনকিলাব” নামে একটি দৈনিকের প্রতিষ্ঠা ও সম্পাদনা করেন কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে পত্রিকাটি স্থায়িত্ব লাভ করতে পারেনি।

পরে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তারই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় “দেশের দাবি” নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা।

রজিউর রহমান চৌধুরী “মাসিক জালালাবাদ” “ সাপ্তাহিক পয়গাম” সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করেন। এছাড়াও তিনি “রয়টার” “এপিপি”র স্থানীয় সংবাদদাতা হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।

একজন শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেও রজিউর রহমান চৌধুরী প্রচুর সুনাম অর্জন করেছিলেন।১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে সাধারণ নির্বাচনে তিনি নেজামে ইসলামের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জয়লাভ করতে পারেননি। শেষ জীবনে তিনি বিভিন্ন প্রকার সমাজসেবা মূলক কার্যক্রমের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন।

১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথিতযশা সাংবাদিক পরোপকারী ও মানব দরদী মাওলানা রজিউর রহমান চৌধুরী মাত্র ৫৪ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন। মৃত্যুকালে তিনি আত্মীয়-স্বজন সহ বহু গুণগ্রাহী রেখে যান।

(তথ্য সূত্রঃ ২০০১ সালে প্রকাশিত “যুগভেরী/একটি প্রাচীন বাংলা সংবাদপত্র”)।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১