‘এই পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অসংখ্য বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। কিন্তু এর একটিরও বিচার হয়নি। প্রতিবার দেশের নাগরিকরা বিচারের দাবি জানালেও সরকার থেকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সময় পাল্টেছে। দেশ থেকে স্বৈরাচার হটানো হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সীমান্ত হত্যার বিষয়ে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। দুদেশের সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হলে সীমান্তে হত্যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’ ঠাকুরগাঁওয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিক শ্রী জয়ন্ত কুমার সিংহ হত্যার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫টায় শহিদ মিনার সংলগ্ন সড়কে ‘আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ’ ব্যানারে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম নাইমের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী শোয়াইব হাসান বলেন, ‘কিছুদিন আগেও আমরা একই দাবিতে এই জায়গায় দাঁড়িয়েছিলাম। আজও দাঁড়িয়েছি। ভারত সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, সীমান্তে হত্যা করে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি চলতে পারে না। মানুষ হত্যা করে সাংস্কৃতিক বিনিময় চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতে পারেনা দ্বিপাক্ষিক প্রকল্প। অবিলম্বে জয়ন্ত হত্যায় জড়িত বিএসএফ সদস্যদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী শাফায়েত মীর বলেন, ‘ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আবরার ফাহাদসহ অসংখ্য বাংলাদেশি শহিদ হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। এতদিন স্বৈরাচার হাসিনা সরকারকে ব্যবহার করে তারা বাংলাদেশকে দখল করার চেষ্টা করেছে। এখন সময় এসেছে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করার। ফেলানী, স্বর্না দাস, জয়ন্তসহ সব হত্যার বিচার এবং পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন ও সীমান্ত চুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’
বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, ‘সীমান্তে ভারত কর্তৃক একের পর এক হত্যা কোনোভাবেই মেনে নেয়ার নয়। ভারতকে বলে দিতে চাই এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করুন, নইলে পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ হবে। যদি এইভাবে সীমান্তে হত্যা চলতে থাকে, তাহলে বাংলাদেশে চাকরিরত ভারতীয়দের বিতাড়িত করা হবে। ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক চুক্তি হয়েছে, কিন্তু এই সীমান্ত হত্যা নিয়ে একটা চুক্তিও হয়নি। যে ভারত আমাদের ভাই বোনদেরকে হত্যা করেছে, সেই ভারতের কোনো প্রকল্প আমরা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হতে দেব না।’
আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক আঞ্জুম শাহরিয়ার বলেন, ‘স্বর্ণা দাসের রক্তের দাগ না শুকাতেই বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছে জয়ন্ত। বাংলাদেশিরা বছরের পর বছর ভারতীয় আগ্রাসনের স্বীকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাই সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা বন্ধে অবিলম্বে উদ্যোগ নিন। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে ভারতকে বিচারের আওতায় আনুন।’
প্রসঙ্গত, রোববার রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি কিশোর জয়ন্ত কুমার সিংহ (১৫) নিহত হন। এ ঘটনায় মহাদেব কুমার সিংহ ও নিটালডোবা গ্রামের দরবার আলী নামের আরো দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন।