
রাজধানীর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন সাধারণ মানুষের গণশৌচাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কার্যালয়ের প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে তিনতলা পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে মলমূত্র ত্যাগ করার কাজে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ। মাসের পর মাস মলমূত্র জমে থাকার উৎকট গন্ধ বের হচ্ছিল। ফলে ভবনের ভেতর নাক চেপে হাঁটাও দায় হয়ে পড়ে।
কার্যালয়ের নিচতলা ময়লার ভাগাড় হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। পুরো ভবনটিই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
সকাল ১১টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার চিরচেনা রূপ আর নেই।
আশপাশে দোকানপাট থাকলেও তেমন একটা ভিড় নেই। একসময়ের সুসজ্জিত ভবনটি এখন পরিত্যক্ত দাঁড়িয়ে। ভবনের সামনেও তেমন একটা লোকজনের দেখা পাওয়া যায়নি।
ভবনের ভেতর ঢোকার আগ থেকে মলমূত্রের গন্ধ নাকে আসছিল।
ঢোকার পর তা আরো প্রকট হয়। ভবনের আশপাশে অবস্থান করা লোকজন জানায়, স্থানীয় হকার থেকে শুরু করে পথচারীরাও ভবনটিকে শৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজনকেও এখানে শৌচকাজ সারতে দেখেছে তারা।
ভবনের ভেতর প্রবেশ করে দেখা যায়, নিচতলা পুরো অন্ধকার হয়ে আছে। দুই পাশের দেয়াল পুড়ে কালো হয়ে আছে।
দুটি রুমে নোংরা পানি জমে আছে। নিচতলাজুড়ে ময়লা-আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে দেখা যায়, বাথরুম থেকে শুরু করে সব রুমের মালপত্র লুট করার পর এসব কক্ষ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের দরজাও খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দরজা খুলতে গিয়ে ভবনের দেয়াল ভাঙতে হয়েছিল। সেখানে ইটের খোয়া ও কাচের টুকরা পড়ে থাকতে দেখা গেল। বহু জায়গায় সিঁড়িও ভাঙা রয়েছে। এমনকি ভবনের ছাদেও ভাঙচুর চালানোর ফলে কোন কক্ষটি কোন কাজে ব্যবহার করা হতো, তা বোঝার কোনো উপায় নেই।
ছয় ও সাত তলায় পাওয়া গেছে থাকার জায়গা
ভবনটির তিনতলা পর্যন্ত মলমূত্রের গন্ধ পাওয়া গেলেও চারতলা থেকে গন্ধ কমতে শুরু করে। তবে প্রতিটি তলায়ই ইট-পাথরের ধ্বংসাবশেষ স্তূপাকারে পড়ে থাকতে দেখা গেল। ছয় ও সাত তলায় গিয়ে দেখা যায়, তলা দুটির শেষ দিকের বাঁ পাশের রুমের ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করে কিছু অংশ থাকার ও বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে সেখানে কোনো লোকজনের দেখা পাওয়া যায়নি। সেখানে দুটি স্যান্ডেল, কয়েকটি সিগারেটের প্যাকেট ও কিছু জামাকাপড় পড়ে থাকতে দেখা যায়। লোকজনের দেখা না পাওয়া গেলেও ভবনের বাইরে অবস্থান করা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভবনের ওই তলা দুটিতে কয়েকজন মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। তবে সকাল থেকে কয়েকটি গণমাধ্যমের আসা-যাওয়ায় তারা স্থান ত্যাগ করে। তারা ছিন্নমূল মানুষ বলে জানা গেছে। এ ছাড়া রাতে আরো অনেক লোক ভবনে প্রবেশ করে বলে জানা গেছে।
ভবনের আশপাশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভবনটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর আগস্ট মাসজুড়ে বিভিন্ন সময় ভবনটিতে লুটপাট চালানো হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে কাপড়ের ব্যবসা করছেন মুন্সীগঞ্জ জেলার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগে এখানে প্রচুর মানুষের ভিড় থাকত। সব সময় নেতাকর্মীদের যাতায়াত চলত। এখন তো মানুষ মলমূত্র ত্যাগ করতে যায়।’
আরেক ব্যবসায়ী জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না ভাই। তবে ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। এটা এই ভবন দেখলেই বোঝা যায়।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুলিস্তানে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ১০ তলাবিশিষ্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি ২০১৮ সালের ২৩ জুন উদ্বোধন করেছিলেন দলের সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল।