শুক্রবার, ১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

‘আমি প্রবাসীতে’ নিবন্ধনে মিলবে ব্র্যাকের সেবা

বিদেশ-ফেরতদের আর্থ-সামাজিক পুনরেকত্রীকরণে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সুবিধা পেতে এখন থেকে বিদেশ-ফেরত অভিবাসীরা ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। এজন্য তাদের ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে ঢুকে নির্ধারিত নিবন্ধন ফর্মটি পূরণ করতে হবে। এরপর যাচাই বাছাই শেষে যোগ্যতা অনুযায়ী তারা সেবা পাবেন।

 

রোববার (২৬ মে) ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ এবং আমি প্রবাসী লিমিটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ও সহ-উদ্যোক্তা নামির আহমাদ নূরী আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ সময় ব্র্যাকের শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও মাইগ্রেশন কর্মসূচির পরিচালক সাফি রহমান খান, মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান, আমি প্রবাসী লিমিটেডের চিফ টেকনোলজি অফিসার সাজেদুল হক, আমি প্রবাসী লিমিটেডের হেড অব অপারেশনস আহসানুল হকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 

অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘ব্র্যাক যেমন দক্ষ লোক তৈরি করে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছে তেমনি বিদেশ-ফেরতরা যেন আর্থ-সামাজিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সেজন্য অনেকদিন ধরে কাজ করছে। এজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা বিদেশ-ফেরতদের চিহ্নিত করে নানা সেবা দিচ্ছি। সেই প্রক্রিয়ার পাশাপাশি এখন থেকে বিদেশ-ফেরতরা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন। এরপর যাচাই বাছাই করে আমরা তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী মনোসামাজিক, অর্থনৈতিক পুনরেকত্রীকরণ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবো।’

 

অনুষ্ঠানে আমি প্রবাসী লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নামির আহমাদ নূরী বলেন, ‘আমি প্রবাসী এখন অভিবাসন খাতের সবচেয়ে বড় অনলাইন পোর্টাল। বিদেশে চাকরির প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজ করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বিএমইটি এর সঙ্গে কাজ করছে ‘আমি প্রবাসী’। বিদেশ যেতে ইচ্ছুক লোকজন এখানে নিবন্ধন করে খুব সহজেই সেবা পাচ্ছেন। ব্র্যাক বিদেশ-ফেরতদের জন্য নানা ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এখন থেকে বিদেশ-ফেরতরা এই অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারবেন। এরপর আমরা সেই নিবন্ধনের তালিকা ব্র্যাকের কাছে পাঠাবো। ব্র্যাক যাচাই-বাছাই করে ঠিক করবে কে কোন ধরনের সুবিধা পাবেন।’

 

নামির আহমাদ নূরী জানান, বৈদেশিক কর্মসংস্থানসংক্রান্ত সেবা আরও সহজ ও ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে ২০২১ সালে যাত্রা শুরু করে ‘আমি প্রবাসী (Ami Probashi)’ অ্যাপ। মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালের দ্বারস্থ না হয়ে সম্ভাব্য প্রবাসী ও বিদেশ-ফেরত প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা যেন সরকারি-বেসরকারি সুবিধাগুলো পান তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে আমি প্রবাসী লিমিটেডের এই অ্যাপটি। বর্তমানে বিএমইটি ডাটাবেজে রেজিস্ট্রেশন, প্রি-ডিপার্চার ওরিয়েন্টেশন (পিডিও) বুকিং, ক্লিয়ারেন্স আবেদনের পাশাপাশি ট্রেনিং কোর্সে আবেদনের সাথে সাথে বিদেশে চাকরির সুযোগ খোঁজার জটিলতা ও খরচ কমিয়ে অভিবাসন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তুলতে কাজ করছে এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি। অন্যদিকে অভিবাসন খাতকে নিরাপদ, দক্ষতা বৃদ্ধি, সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বিদেশ-ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণে নিজস্ব অর্থায়নে ও বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশ-ফেরত অভিবাসীদের আর্থিক-সামাজিক ও মনোসামাজিকভাবে পুনরেকত্রীকরণে কাজ করছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা এবং সারা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এনজিও ব্র্যাক। ১৯৭২ সালের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দেশে ও দেশের বাইরে নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে চলা ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কর্মসূচি হলো মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। ব্র্যাকের এই প্রোগ্রাম ২০০৬ সাল থেকে দেশের অভিবাসনপ্রবণ জেলাসমূহে বিদেশগামী নারী ও পুরুষের মাঝে সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম, বিদেশ-ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণ, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, অভিবাসন খাতে অ্যাডভোকেসি ও নানাবিধ সহযোগিতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।

 

বিদেশ-ফেরত বাংলাদেশিদের পুনরেকত্রীকরণের জন্য বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ অর্থায়নে ‘ইমপ্রুভড সাসটেইনেবল রিইন্টিগ্রেশন অব বাংলাদেশি রিটার্নি মাইগ্রেন্টস (প্রত্যাশা-২)’ প্রকল্প, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় ‘রিইন্ট্রিগ্রেশন অব মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্প, ইউকে হোম অফিসের অর্থায়নে ‘রিইন্টিগ্রেশন প্রোগ্রাম ফর সাসটেইনেবল রিইন্টিগ্রেশন অব বাংলাদেশ রিটার্নিস প্রজেক্ট ফেইজ টু’, জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক কেএফডব্লিউ’র অর্থায়নে ‘স্ট্রেন্থেনিং ইকোনোমিক রিকভারি ক্যাপাসিটি অফ ক্লাইমেট-ভালনারেবল নিউ-পুওর, স্পেশালি রিটার্নি মাইগ্রেন্টস ইমপ্যাক্টেড বাই কোভিড-১৯’ প্রকল্প, ‘ফ্রন্টেক্স-জয়েন্ট রিইন্টেগ্রেশন সার্ভিসেস (জেআরএস-ইইউআরপি)’ প্রকল্প, এবং বাংলাদেশ সরকারের ‘রিকভারি এন্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইনফর্মাল সেক্টর ইপ্লয়মেন্ট (রেইজ): রিইন্টিগ্রেশন অব রিটার্নিং মাইগ্রেন্টস’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ব্র্যাক। এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে দেশে ফিরে আসার পর ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি সহায়তা পাচ্ছেন বিদেশ-ফেরত অভিবাসীরা। প্রবাসীদের দেওয়া হচ্ছে কাউন্সেলিং সেবা। প্রয়োজনে মানসিক চিকিৎসা এবং ট্রমা কাউন্সেলিং সহায়তাও প্রদান করা হচ্ছে। তারা যেন টেকসইভাবে আর্থ-সামাজিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সেজন্য বিদেশ-ফেরত অভিবাসীদেরকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনরেকত্রীকরণে দক্ষতা উন্নয়ন, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এবং ম্যাটেরিয়াল সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১