
সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, অভাব-সমৃদ্ধি, সবই জীবনের অংশ। তবে কেউ কেউ অবশ্য “সোনার চামচ” মুখে নিয়ে জন্মায়। যার ফলে জীবন মুদ্রার অপর পিঠ তাদের কাছে থেকে যায় অচেনা। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনের বাস্তব চিত্র সম্পর্কে ধারণা থাকাটা প্রত্যেক মানুষের জন্যই জরুরি। আর এজন্য পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকলেও সন্তানকে অভাব সম্পর্কে ধারণা দিতে বলছেন তারা। বলছেন, সন্তানকে প্রয়োজন আর বিলাসিতার পার্থক্য বোঝাতে।
এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা বাবা-মাকে দেখেই শেখে। আপনি যদি সন্তানকে কিছু শেখাতে চান, তবে নিজের ব্যবহার সম্বন্ধেও সচেতন হতে হবে।
মুখ ফুটে চাইলেই, সঙ্গে-সঙ্গে সব পাওয়া যায়, এমন ধারণা যেন আপনার সন্তানের না হয়। প্রয়োজন আর বিলাসিতার পার্থক্য বোঝানো। সন্তানকে বোঝান যে, জামা ছোট হয়ে গেলে, সেটা কেনা প্রয়োজন। কিন্তু, ঘরে খাবার মজুত থাকা সত্ত্বেও বাইরে থেকে খাবার কিনে আনা বিলাসিতা। সন্তান যেন বিলাসদ্রব্যে অভ্যস্ত না হয়ে পড়ে। ছোটবেলা থেকে বিলাসিতার নেতিবাচক দিকগুলো বোঝানোর চেষ্টা করুন।
সন্তানকে টাকা জমানোর জন্য মাটির ভাঁড় বা পিগি ব্যাংক কিনে দিন। টাকা জমাতে নানাভাবে উৎসাহ দিন। তারপর ব্যাংকে তার একটা সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলে দিন। উৎসাহ দিন যে, এভাবে টাকা জমালে সে নিজেই নিজের শখ পূরণ করতে পারবে।
এছাড়া সন্তানকে অভাব সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক সে সম্পর্কে-
দুঃসময়ের প্রস্তুতি
জীবন সব সময় একই রকম ভাবে না-ও চলতে পারে। বাবা-মায়ের কর্মক্ষেত্রে সমস্যা হওয়া, হঠাৎ করে চাকরি হারিয়ে ফেলা, এসব তো নিত্য ঘটছে। তখন যাতে জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনে সন্তান অতিরিক্ত সমস্যায় যাতে না পড়ে, সে দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
বাস্তবের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা
অভাব জীবনের একটি অংশ। আপনার সন্তান যদি ছোটবেলা থেকেই অভাবের ধারণা পায়, তাহলে বড় হয়ে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলেও সে সহজে মানিয়ে নিতে পারবে।
কৃতজ্ঞতাবোধ
যখন আপনার সন্তান অভাবের গুরুত্ব বুঝতে পারবে, তখন সে জীবনে যা কিছু পেয়েছে, তার জন্য কৃতজ্ঞ হতেও শিখবে।
পরিশ্রমের গুরুত্ব উপলব্ধি
আপনার সন্তান বুঝতে শিখবে, চাইলেই সব কিছু পাওয়া যায় না। কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা জীবনে সব কিছু উপার্জন করতে হয়।
সন্তানকে অভাব সম্পর্কে শেখাবেন যেভাবে
- আপনার নিজের জীবনের নানা ওঠাপড়ার অভিজ্ঞতা সন্তানের সঙ্গে ভাগ করে নিন।
- অভাবী মানুষদের জীবন সমন্ধে তাদের একটা ধারণা দিন। সন্তানকে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে, মানুষ নানা ধরনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতে জীবনধারণ করে।
- সরল জীবনযাপন করুন। অপ্রয়োজনীয় বিলাসবহুল জিনিসপত্র কেনার পরিবর্তে সন্তানকে সরল জীবনযাপন করতে শেখান।
- যা কিছু আছে, তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে শেখান সন্তানকে।
তবে এক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখা খুবই জরুরি। সেগুলো হলো-
- সন্তানের বয়স ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে আপনার শেখানোর পদ্ধতির সামঞ্জস্য বজায় রাখুন। অতিরিক্ত কঠোর হয়ে উঠবেন না।
- জীবনের অতিরিক্ত নেতিবাচক দিক তুলে ধরে সন্তানকে ভীত করে তুলবেন না।
- অভাব কাটিয়ে উঠে সফল হওয়ার অনুপ্রেরণামূলক গল্পও তাকে শোনান।