নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এখন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমকে পাঠানো উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, দায়িত্ব পালন অসম্ভব করে তুললে জনগণকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সংস্কার প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো আপস করবে না। ঘোষিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হবে। ফ্যাসিবারের বিচার অবশ্যই করা হবে। একঘরে দুই পীর অর্থ্যাৎ কোনো সমান্তরাল সরকার পরিচালনার যেকোনো চেষ্টা মোকাবিলা করা হবে।

গতকাল রোববার একনেক সভা শেষে উপদেষ্টাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা সূত্রে জানা গেছে, আজ জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে সবর্দলীয় বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল রাতে তার সঙ্গে দেশের তিনটি রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতারা সাক্ষাৎ করেন। দলগুলোর প্রতিনিধিরা আজকের সর্বদলীয় বৈঠকেও অংশ নেবেন। দলগুলোর নেতারা ড. ইউনুসের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন ও আস্থার কথা গতকাল রাতের সাক্ষাতে জানান। একই সঙ্গে তারা বলেছেন, ‘আপনার পদত্যাগ কেউ চায় না।’

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা তার পদত্যাগের সিদ্ধান্তে এখনো অনড় রয়েছেন। বৈঠককে তিনি বলেছেন, পূর্ণ স্বাধীনতা না পেলে দায়িত্ব পালন করবেন না। জনগণকে তিনি অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে তা সম্ভব নয়। এজন্য মাঠের অবস্থা যাচাই করার জন্য আগে কম করে হলেও কিছু স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন করতে চান।

সূত্র জানায়, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনকে সরকারের অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে এ কাজ তিনটি তারা এগিয়ে নিতে চান। এক্ষেত্রে দলগুলো থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতার আশ্বাস পেলে সরকার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। অন্যথায় সার্বিক বিষয়ে জনগণের সম্মুখে বিস্তারিত তুলে ধরে পদত্যাগ করবেন।

গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতির মাধ্যমে সরকার তার সর্বশেষ অবস্থান জানিয়েছে। পরিষদের সভা শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে দাবি করা হয়, দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহের সৃষ্টি করা হচ্ছে।

শত বাধার মাঝেও গোষ্ঠীস্বার্থকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

উপদেষ্টা পরিষদ মনে করে, দেশকে স্থিতিশীল রাখতে; নির্বাচন, বিচার ও সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এ দেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনবে এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সব কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

এদিকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে থাকছেন। উনি বলেননি যে পদত্যাগ করবেন। অন্য উপদেষ্টারাও থাকছেন। আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমরা সে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি।’

তাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার ওপর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে উল্লেখ করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, এ দায়িত্ব ছেড়ে তো আমরা যেতে পারব না।

দায়িত্ব পালনে যেসব প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন জানিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে কী প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, কার কী প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, সেগুলো দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বড় পরিসরে আগামী নির্বাচন এবং একটি সুশাসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের জন্য যে ধরনের ক্ষেত্র তৈরি করা দরকার, সে কাজেও কী কী প্রতিবন্ধকতা কোথা থেকে আসছে, সেগুলো আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।’

বর্তমান সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তি এবং সমর্থনে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের ভিত্তিই জুলাই গণঅভ্যুত্থান। সেখানে কাউকে নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হলে সেটা সমীচীন হবে না।

গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সব শক্তি ও রাষ্ট্রীয় সব সংস্থাকে লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার আহবান জানিয়ে এই উপদেষ্টা বলেন, এটা তো আমাদের একার দায়িত্ব নয়।