বুধবার, ২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কেন সজনে পাতা নিয়ে এতো আলোচনা? যে গুণাবলী রয়েছে তাতে

গ্রাম বাংলার পরিচিত একটি গাছ সজনে। এ গাছের সবজি সিজেনাল হলেও পাতা সারাবছরই পাওয়া যায়। পরিণত বয়সী বাংলাদেশিদের মধ্যে সজনের ডাটা বা সজনে শাক খায়নি,  এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। সজনের বৈজ্ঞানিক নাম ‘মরিঙ্গা ওলাইফের’। এ গাছের ডাটার পাশাপাশি পাতারও অনেক উপকারিতা রয়েছে। গবেষকরা এ গাছের পাতাকে সুপার ফুড বলে থাকেন।

সজনের পাতার মধ্যে রয়েছে বিপুল পরিমাণে খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন। পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ভিটামিন এ,  ভিটামিন সি, এগুলো ছাড়াও প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটও আছে এতে। অনেকগুলো পুষ্টি একসঙ্গে থাকার কারণে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশে বেশ আলোচনায় রয়েছে সজনে পাতা। এই পাতার ভর্তা খাওয়ার পাশাপাশি পাতাকে শুকিয়ে গুঁড়া করেও খাচ্ছে অনেকেই। শুধু তাই নয়, উদ্যোক্তারা নিয়মিত বাজারজাত করছে সজনে পাতার গুঁড়া। আজকে জানাবো সজনে পাতার উপকারিতা বা গুণাবলী সম্পর্কে :

সজনে পাতার পুষ্টিগুণ

  • এটি রোগ প্রতিরোধে সহযোগিতা করে।
  • হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে। সজনে পাতায় প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে, যা দাঁত ও হাড়ের গঠনের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
  • পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন- খাবার সহজে হজম না হওয়া, পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমে থাকা, বুকজ্বালা ইত্যাদি সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
  • হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। পুরুষদের টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে।
  • সজনে পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, যা চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বকে বয়সের ছাপ দ্রুত পড়তে দেয় না।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য সাহায্য করে।
  • ত্বকের সংক্রমণ, মূত্রনালী সংক্রমণ এবং হজমের সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এটি।
  • প্রদাহনাশক হিসাবে কাজ করে অর্থাৎ শরীরের বিভিন্ন ব্যথা দূর করে।
  • সজনে পাতাতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
  • সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল যৌগ রয়েছে।

যেভাবে সজনে পাতা খাবেন :

  • সজনে পাতাকে শাকের মতো ভেজে খাওয়া যেতে পারে।
  • সজনে পাতাকে সেদ্ধ করে ভর্তা করে খাওয়া যেতে পারে (তবে রান্না করলে ভিটামিন সি অনেকাংশে কমে যায়)।
  • সজনে পাতাকে রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে খাওয়া যেতে পারে।
  • চায়ের মধ্যে দিয়ে সজনে খাওয়া যেতে পারে।
  • এই পাতাকে ব্লেন্ড করে জুস হিসেবেও খাওয়া যেতে পারে।
  • কোনো কিছুর অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরের জন্য ভালো নয়। তাই সজনে পাতার গুঁড়া বা রস একদম নিয়মিত না খেয়ে একটু বিরতি দিয়ে খাওয়া ভালো। ১০-১৫ দিন খাওয়ার পর কিছুদিন বিরতি দিয়ে খেলে ভালো হয়।

সজনে পাতায় যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে, ঠিক তেমনি এটি অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে সৃষ্টি হতে পারে বিভিন্ন সমস্যা। বিশেষ করে এই পাতা অতিরিক্ত খেলে বমি বমি ভাব, পেটের সমস্যা, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এছাড়া ব্লাড প্রেসারের ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত সজনে পাতার গুঁড়া বা রস খেতে থাকলে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে। সাজনে পাতা সংলগ্ন ডালগুলো আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর। এ ডালগুলোতে ক্ষতিকর উপাদান থাকে, যা যেগুলো আমাদের দেহের ইমিউনিটি সিস্টেমের ক্ষতি করে।

গর্ভাবস্থায় সজনে পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। সজনের পাতা সংলগ্ন ডালে যে বিষাক্ত উপাদান রয়েছে, সেটি এ সময় শরীরে প্রবেশ করলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা অনেক। সজনে পাতা গুঁড়া বা রসের ক্ষেত্রে এ ডাল মিশ্রিত থাকতে পারে। তাই গর্ভকালীন এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো।

ডায়াবেটিস রোগীদের অনেকে মনে করেন, শুধু সজনে পাতা খেলে ডায়াবেটিস অর্থাৎ রক্তের সুগার ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বিষয়টি আসলে এরকম নয়। ডায়াবেটিস রোগীরা ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি সজনে পাতার জুস বা গুঁড়া খেলে এটি সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। যাদের প্রি-ডায়াবেটিস তারা সজনে পাতা খাওয়ার মাধ্যমে এবং সঙ্গে অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেহে সুগারের মাত্রা ঠিক রাখার চেষ্টা করতে পারেন।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০