বুধবার, ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কোটি টাকা জরিমানা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না: সিপিডি

বাজারকে প্রভাবিত করে কেউ সাত দিনে ৫০ কোটি টাকা লাভ করার পর ১ কোটি টাকা জরিমানা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের জীবনযাত্রা সংকটে পড়েছে, এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে মনে করে সংস্থাটি।শনিবার (১৬ মার্চ) আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছে সিপিডি। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক মুনতাসীর কামাল প্রমুখ।সিপিডি বলেছে, গত ১০ থেকে ১১ বছর ধরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণে বড় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও এই ঘাটতি থাকবে। বছর শেষে তা ৮২ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। সরকারের বাজেট ঘাটতি কমেছে ঠিক, কিন্তু ঘাটতি নিরসনে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। বছরজুড়ে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। এছাড়া রফতানি, রিজার্ভ, প্রবাসী আয়, বিদেশি বিনিয়োগসহ বহিস্থ খাতের প্রায় সবগুলো সূচকে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।সংস্থাটি আরও বলছে, অর্থনীতি এখন বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। যেমন— রাজস্ব আহরণ ও বাজেট বাস্তবায়নে শ্লথগতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকে তারল্যের সংকট, রফতানি, প্রবাসী আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া।

 

এমন বাস্তবতায় আগামী বাজেট প্রণয়নে তিনটি বিষয়কে মূল লক্ষ্য নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। প্রথমত, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া; দ্বিতীয়ত, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া, যাতে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে রাজস্ব আয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যয় করা সম্ভব হয় এবং তৃতীয়ত, দক্ষতার সঙ্গে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি ব্যয় করা, যাতে অর্থের অপচয় না হয়।

 

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের মূল্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত এ রকম— বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা। সে জন্য প্রয়োজনীয় মধ্যমেয়াদি সংস্কার করতে হবে।সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে মূল্যস্ফীতি কমানো ছিল বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। তা বাস্তবায়নে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু কেউ বাজারকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে সাত দিনে ৫০ কোটি টাকা লাভ করতে পারলে ৫০ লাখ বা ১ কোটি টাকা জরিমানা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। সেজন্য বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে এবং তা দৃশ্যমান হতে হবে।

 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি দুটি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার ঘটনা ইতিবাচক। ব্যাংকগুলো দুর্বল হওয়ার পেছনে বাস্তব কারণ ছিল। দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় চতুর্থ প্রজন্মের এতগুলো ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল কি না, সেটা একটা প্রশ্ন। এছাড়া ব্যাংকগুলোয় সুশাসনের অভাব ছিল দৃশ্যমান। যেসব কারণে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়েছে, সেসব কারণগুলো আমলেও নেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। সেটা না করে শুধু একীভূত করা হলে কার্যকর কিছু হবে না।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য লক্ষ্যভিত্তিক যে কর্মচাঞ্চল্য থাকা প্রয়োজন ছিল, তা দেখা যায়নি। সংস্কার কোথায় দরকার, তা বহুবার বলা হয়েছে; এখন বাজেটে তার প্রতিফলন প্রয়োজন। এছাড়া সংসদে বাজেট আলোচনায় সংসদ সদস্যদের আরও সক্রিয় অংশগ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

All Rights Reserved ©2024