বুধবার, ১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কোরবানির পশু ক্রয়ে সতর্কতা

পবিত্র ঈদুল আজহা আসন্ন। কোরবানির জন্য সারা দেশে চলছে পশু ক্রয়-বিক্রয়ের জমজমাট বাণিজ্য। আর এই সুযোগে কিছু অসাধু চক্র প্রতারণা করছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা গরু মোটাতাজা করতে বিভিন্ন ওষুধ খাওয়াচ্ছে, ইনজেকশন দিচ্ছে। ফলে গরুর শরীরে পানি, জলীয় পদার্থ ও চর্বি জমছে। গরু মোটাতাজা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করায় এগুলো দেখতে সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান, বাজারে দামও বেশি। স্বাস্থ্য ও প্রাণী সম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম উপায়ে অস্বাভাবিকভাবে মোটাতাজা করা গরুর মাংস খাওয়ার ফলে এ দেশের মানুষ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও ব্রেন স্ট্রোকেও আক্রান্ত হতে পারে। মানুষের কিডনি, লিভার, হৃদপিণ্ডসহ শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা সম্পূর্ণই প্রতারণা এবং অনেকটাই নীরবে মানুষ হত্যার শামিল।

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষকে প্রতারণা, ঠকানো ও ধোঁকাবাজি মানবতাবিরোধী ঘৃণ্য এবং শরিয়ত গর্হিত কাজ। যা দেশ, সমাজ ও সভ্যতাকে কলুষিত করে। মানুষের অসততা, কুপ্রবৃত্তি ও অসৎ বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে এটি খুবই নিকৃষ্ট। ইসলামে ধোঁকা ও প্রতারণার কোনো স্থান নেই। কোনো মুসলমান কাউকে ধোঁকা ও প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে পারে না। ধোঁকা মুনাফিকের স্বভাব। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে প্রতারণার জন্য কঠিন শাস্তির কথা বলেছেন। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় মুনাফিকরা মুখে বলত আমরা আল্লাহকে, আল্লাহর নবীকে এবং এই কোরআনকে মানি। কিন্তু তারা বাস্তবে মানত না। যার ফলে আল্লাহতায়ালা এই আয়াত নাজিল করেন, ‘এমন কিছু লোক আছে যারা বলে আমরা আল্লাহকে এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস করি। প্রকৃতপক্ষে তারা বিশ্বাস করেনি, তারা আল্লাহকে ও মুমিন বান্দাদের ধোঁকা দিতে চায়। (সত্য কথা এই যে) তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না। তাদের এই বিষয়ে কোনো উপলব্ধি নেই।’ (সুরা বাকারা ৮-৯)

বর্ণিত আয়াত অনুযায়ী প্রতারণাকারী প্রথমেই সে তার নিজের ক্ষতি করছে। প্রতারণা করার কারণে তার আমল ও আখেরাত বরবাদ হচ্ছে। তার নীতি-নৈতিকতা মুনাফিকদের সঙ্গে সাদৃশ্য হচ্ছে। জীবিকা উপার্জনের উত্তম পেশা হিসেবে ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। পবিত্র কোরআনে নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের পরই ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন নামাজ শেষ হয়ে যাবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ করো।’ (সুরা জুমা ১০)

অধিকাংশ নবী-রাসুল ও সাহাবিরা পেশা হিসেবে ব্যবসাকে বেছে নিয়েছিলেন। মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ব্যবসা-বাণিজ্য। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যে সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, বিশ^স্ততা, আমানতদারি থাকা অপরিহার্য। ব্যবসা-বাণিজ্যে ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। দ্রব্যের কোনো দোষ-ত্রুটি থাকলে ক্রেতার সম্মুখে তা প্রকাশ করতে হবে। সেক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হবে এবং তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
৩১