রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় একটি দুর্গা মন্দির ধ্বংসের অভিযোগে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছে সরকার। শুক্রবার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় একটি দুর্গা মন্দির ধ্বংসের অভিযোগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, গত বছর দুর্গাপূজার সময় পূর্বানুমতি ছাড়াই স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় রেলওয়ের জমিতে অস্থায়ী পূজা মণ্ডপ স্থাপন করে। পরবর্তীতে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই শর্তে অনুমতি প্রদান করে ‘পূজা উদযাপন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়োজকরা অস্থায়ী মণ্ডপটি সরিয়ে ফেলবে’।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের অক্টোবরে পূজা শেষ হওয়ার পর আয়োজকরা পারস্পরিক চুক্তি লঙ্ঘন করে অস্থায়ী মণ্ডপটি সরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। বরং তারা সেখানে একটি ‘মহাকালী’ (কালী মূর্তি) স্থাপন করে। বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পরেও, দুর্ভাগ্যবশত তারা রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থা উপেক্ষা করে মণ্ডপটি স্থায়ী করার উদ্যোগ নেয়। গত বছরের ডিসেম্বরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মণ্ডপের আয়োজকদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে রেলওয়ের মালিকানাধীন রেললাইনের উভয় পাশে অবৈধভাবে নির্মিত সমস্ত ‘অননুমোদিত স্থাপনা, যার মধ্যে রয়েছে বিক্রেতা, শত শত দোকান এবং রাজনৈতিক দলের অফিস’ অপসারণের জন্য একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। মূলত, বিদ্যমান রেললাইনের পূর্ব থেকে ২০০ ফুট দূরে কেবল বাংলাদেশ রেলওয়ের জমি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রেলওয়ের ‘ঢাকা-টঙ্গী অংশে তৃতীয় ও চতুর্থ ডিজি লাইন নির্মাণ এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর অংশে ডুয়েল গেজ লাইন দ্বিগুণকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের আওতায় আরও দুইটি রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে এবং এই প্রকল্পের অধীনে নতুন লাইন সম্পন্ন করার জন্য এই জমির টুকরোটি অত্যন্ত জরুরি ছিল।

গত কয়েক মাস ধরে অবৈধ ভূমি দখলকারীদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে। ২৪ এবং ২৫ জুন রেলওয়ে অবশেষে সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দেয়, যার মধ্যে রয়েছে পূজা আয়োজকদের অস্থায়ীভাবে নির্মিত মণ্ডপটি অপসারণ করা। অবশেষে, ২৬ জুন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রেলওয়ে খিলক্ষেত এলাকায় রেলপথের ধারে সব অননুমোদিত স্থাপনা শান্তিপূর্ণভাবে উচ্ছেদ করে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলাকালীন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের অংশগ্রহণে যথাযথ শ্রদ্ধার সঙ্গে অস্থায়ী মণ্ডপের প্রতিমা বালু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। সরকারি জমি পুনরুদ্ধারের জন্য অননুমোদিত স্থাপনা অপসারণ একটি নিয়মিত এবং আইনানুগ প্রশাসনিক কার্যকলাপ। যদিও দেশের আইন অনুসারে নির্মিত কোনো ধর্মীয় স্থাপনার সঙ্গে বৈষম্য না করে সমস্ত উপাসনালয়ের পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করে, তবুও কোনো পরিস্থিতিতেই সরকারি জমি দখল করে ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ অনুমোদিত নয়। অস্থায়ী মণ্ডপের আয়োজকরা তাদের নিজস্ব চুক্তি লঙ্ঘন করে রেল কর্তৃপক্ষের আস্থা এবং সদিচ্ছাকে স্পষ্টতই কাজে লাগিয়েছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সকল সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার মধ্যে রয়েছে উপাসনালয়ের সুরক্ষা। বাংলাদেশকে তার সমন্বিত ঐতিহ্য ধরে রাখতে কখনো বাধা দেওয়া হয়নি, যেখানে প্রতিটি নাগরিক তার বিশ্বাস বা বিশ্বাস নির্বিশেষে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং উন্মুক্ত সমাজে স্বাধীনভাবে বসবাস এবং সমৃদ্ধ হতে পারে এবং করতে পারে।