বৃহস্পতিবার, ১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

খেলাপি হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ছেন ইবি শিক্ষার্থীরা

করোনাকালে অনলাইন ক্লাসের জন্য স্মার্টফোন ক্রয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৫৬৮ শিক্ষার্থীকে ‘সফট লোন’ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর চারটি সমান কিস্তিতে বা এককালীন এই ঋণ পরিশোধের কথা থাকলেও লোন পরিশোধ না করেই ক্যাম্পাস ছেড়েছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। তৎকালীন ‘সফট লোন’ কমিটির দায়িত্বে থাকা আহ্বায়ক বা সদস্য সচিব কেউই জানেন না কেউ ঋণ পরিশোধ করেছেন কি না। এমনকি এ-সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য নথিও নেই দপ্তরে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন শুধু ইবি শিক্ষার্থীদের কাছেই ৪৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা পাবে। অন্যদিকে যথাযথ তদারকির অভাবে শিক্ষার্থীরাও বুঝতে পারছেন না কীভাবে এই লোন শোধ দেবেন বা আদৌ দেওয়া লাগবে কি না।

জানা যায়, করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ২৫ জুন ইউজিসির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এক সভায় অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম থাকায় অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম নিশ্চিত করতে সে বছরের ৪ নভেম্বর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সুদবিহীন ঋণের আওতায় অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস বা স্মার্টফোন কিনতে ঋণ প্রদানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন শিক্ষার্থীদের জন্য ‘সফট লোন’ নীতিমালা প্রণয়ন করে। পরে ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা হারে সুদবিহীন ঋণ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেয় ইবি প্রশাসন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঋণগ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীকে তার ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে আগামী ৩১ জানুয়ারি ২০২১-এর মধ্যে ঋণের অর্থ প্রদান করা হবে এবং ঋণগ্রহণকারী শিক্ষার্থীকে ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১-এর মধ্যে স্মার্টফোন ক্রয়ের ভাউচারটি সফট লোন অনুমোদন কমিটির সদস্য সচিবের কাছে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া ঋণগ্রহণকারী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কিংবা অধ্যয়নকালে চারটি সমান কিস্তিতে বা এককালীন শুধু মূল টাকা পরিশোধ করতে হবে এবং ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর নামে কোনো ট্রান্সক্রিপ্ট ও সাময়িক/মূল সনদ ইস্যু করা হবে না।

পরে স্মার্টফোন কেনার জন্য আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই শেষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬৮ জন শিক্ষার্থী ‘সফট লোন’ পাচ্ছেন বলে ঘোষণা দেন ‘সফট লোন’ অনুমোদন কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি দুপুরে তিনি এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ওই সময়ে আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন কেনার জন্য দেশের ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ হাজার ৫০১ জন শিক্ষার্থীকে সুদবিহীন ৩৩ কোটি ২০ লাখ ৮ হাজার টাকা ঋণ দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং গণমাধ্যমে তা নিশ্চিত করেন তৎকালীন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ।

এদিকে করোনা প্রকোপ স্তিমিত হলে দেড় বছরেরও বেশি সময় পর ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কিংবা অধ্যয়নকালে চারটি সমান কিস্তিতে বা এককালীন ঋণগ্রহণ করা এই শিক্ষার্থীদের ঋণ পরিশোধ করার কথা থাকলেও তা না পরিশোধ করেই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেছেন অনেকেই। এ ছাড়া ঋণগ্রহণ করা এসব শিক্ষার্থীর সঠিক তথ্য-উপাত্ত বা নথিও নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে।

এ বিষয়ে ‘সফট লোন’ অনুমোদন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাজ ছিল শুধু অসচ্ছল শিক্ষার্থীর তালিকা প্রণয়ন করা। তারপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ওইসব শিক্ষার্থীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়। তারপর এই তালিকা এবং এ-সংক্রান্ত সব নথি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক শাখায় জমা দেওয়া হয়েছিল। তারা এটা ভালো বলতে পারবে।’

এদিকে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘সফট লোন’ অনুমোদন কমিটির সদস্য সচিব ও তৎকালীন অ্যাকাডেমিক শাখার প্রধান এ টি এম এমদাদুল আলম বলেন, ‘আমি চাকরি ছেড়েছি আরও দুই বছর আগে। বহুবার কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও তারা এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। যার ফলে বহু শিক্ষার্থী ট্রান্সক্রিপ্ট বা সনদ উত্তোলন করে চলে গেছে। হয়তো পুলিশ প্রশাসন দ্বারা এই টাকা উত্তোলন সম্ভব।’

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঋণগ্রহীতা এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সনদ উত্তোলনের সময় যদি আমাদের বিষয়টি প্রশাসন থেকে অবগত করা হতো, তাহলে ঋণ শোধ করে সনদ উত্তোলন করতাম। যেহেতু কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সনদ উত্তোলনে কোনো জটিলতা তৈরি হয়নি, সেহেতু ভেবেছিলাম এটা আর শোধ করা লাগবে না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যদি লোন নিয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তাকে তা পরিশোধ করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে বিদেশে যেটা হয়, শিক্ষার্থীরা চাকরিতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া হয়। আমি মাত্র কয়েক মাস আগেই জয়েন করেছি। এ সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নই, জেনে বিস্তারিত পরে জানাতে পারব।’

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
৩১