
গাজায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সংস্থার ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ত্রাণ নিতে যাওয়া নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে গত দুই দিনে অন্তত ৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে সাতজন। গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার গাজার রাফা শহরে এ ঘটনা ঘটে।
গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের বিতর্কিত সংস্থাটি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, সেনারা ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের বাইরের এলাকায় সতর্কতামূলক গুলি চালিয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে।
সমালোচকরা মনে করেন, গাজার প্রকৃত মানবিক প্রয়োজনের বদলে রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই বিতরণব্যবস্থা চালু করেছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র।
গাজার সাংবাদিকরা জানান, ত্রাণকেন্দ্রের সামনে বহু ক্ষুধার্ত মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিল।
জিএইচএফের ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংগঠন ও দেশ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
জাতিসংঘ : মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের চিত্র হৃদয়বিদারক।
ডুজারিক বলেন, ‘আমরা ও আমাদের অংশীদারদের একটি সুসংগঠিত ও নীতিনির্ভর পরিকল্পনা আছে, যা গাজা, সুদান, মায়ানমারসহ যেখানেই হোক—সব জায়গায় একই মানবিক নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। জিএইচএফের পরিকল্পনা মানবিক মানদণ্ড পূরণ করে না।’
ফিলিস্তিন : গাজার সরকারি গণসংযোগ অফিস রাফায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, সাহায্য দেওয়ার নামে ক্ষুধার্ত বেসামরিক লোকজনকে ডেকে এনে তাদের ওপর সরাসরি গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েল : প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন, ‘জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে কিছু সময়ের জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল, তবে আমরা তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনি।’
নেতানিয়াহুর দাবি, ‘গাজায় কেউ অপুষ্টিতে ভুগছে, এমন প্রমাণ নেই। যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একজন কৃশকায় লোকও দেখা যায়নি।’
যুক্তরাষ্ট্র : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এই ঘটনাকে কেবল ‘অভিযোগ জানানোর কৌশল’ বলে অবজ্ঞা করেন। তিনি বলেন, ‘হামাস এই সাহায্য কার্যক্রমকে বাধা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে।’
ব্রুসের দাবি, এই মুহূর্তে গাজায় আট হাজার খাবার প্যাকেট সরবরাহ করা হয়েছে। জটিল পরিস্থিতির মধ্যেও সাহায্য কার্যক্রম চলছে।
জিএইচএফ : বিতর্কিত সহায়তা সংস্থাটি দাবি করেছে, ‘একসময় বিকেলে এত মানুষ ভিড় করেছিল যে আমাদের কর্মীরা পেছনে সরে যায়, যেন কিছু মানুষ নিরাপদে সাহায্য নিতে পারে।’
সংস্থাটি জানায়, তারা প্রায় আট হাজার খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছে, যা গড়ে ৫.৫ জন মানুষকে ৩.৫ দিন খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট।
রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল : এই সংস্থার নীতিমালাবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্ডিন ল্যাং বলেন, ‘এই ত্রাণ কার্যক্রম মানবিক নয়, বরং সামরিকভাবে পরিকল্পিত।’
হার্ডিন বলেন, ‘ক্ষুধা থেকে মানুষকে বাঁচাতে খাদ্য ছাড়াও চিকিৎসা, অপুষ্টি কেন্দ্রের প্রয়োজন হয়। এসব কিছুই এই পরিকল্পনায় নেই।’
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) : এই সংস্থার মুখপাত্র আহমেদ বায়রাম বলেন, এই সাহায্য বিতরণ পদ্ধতি মানবিক নয়। যে দেশ রাফা ধ্বংস করেছে, মানুষকে সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছে—এখন সেই তারাই সেখানে সাহায্য নিতে বলছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিকে গাজায় গতকাল আরো ৪৩ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে ওসামা আল-আরবিদ নামের সাংবাদিকের বাড়িতে হামলায় আটজন নিহত হয়েছে। এ নিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে।
এ ছাড়া ইয়েমেনের সানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান হামলা করেছে ইসরায়েল। আরো হামলার হুমকি দিয়েছে দেশটি। মূলত হুতির ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে এই হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল ইস্যুতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো। এ ছাড়া ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছে ইন্দোনেশিয়া।
এদিকে সম্প্রতি গাজায় চালানো হামলায় হামাস নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন নেতানিয়াহু। সূত্র : আলজাজিরা