বুধবার, ২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গ্যাস সংকট, তীব্র ভোগান্তি

ফ্রিজে রাখা খাবার গরম করে খেয়ে অফিসে যাবেন আরিফুর রহমান সোহেল। কিন্তু চুলোয় গ্যাস নেই। তাই বাসায় খাবার না খেয়েই তাকে অফিসে যেতে হয় তাকে। সোহেল রাজধানীর মগবাজার থাকেন। সেখানে গ্যাসের এই সংকট দীর্ঘদিনের। উষ্মা প্রকাশ করে সোহেল বলেন, প্রতিদিন সকাল ৯টায় গ্যাস চলে যায়। বিকাল ৩টা-৪টা পর্যন্ত একটু গ্যাসও থাকে না। স্ত্রীকে রান্না করতে প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। উত্তর বাড্ডার বাসিন্দা গাজী রুবায়েতের ভোগান্তি আরও চরম। প্রায় ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকে না তার বাসায়।

রুবায়েত জানান, সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে তার বাসার গ্যাস চলে যায়। সারাদিন গ্যাস না থাকার পর রাত ১০-১১টার দিকে আসতে শুরু করে। তাই কখনো রাত জেগে আবার কখনও খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে রান্না করতে হয় তাদের। গাজী রুবায়েত বলেন, গ্যাসের এই কষ্ট প্রতিদিন। প্রত্যেক মাসে গ্যাস বিল দেয়ার পরও এতো কষ্ট করতে হয়। বাড়িতে মেহমান এলে তখন অসুবিধায় পড়তে হয়।

কিছুদিন ধরে রাজধানী জুড়েই গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কোথাও দিনে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা আবার কোথাও ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকে না। কিছু এলাকায় গ্যাস থাকলেও তা দিয়ে নিভু নিভু আগুন জ্বলে। ওই আগুনে রান্নাও করা যায় না। ফলে গ্যাসের তীব্র সংকটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঢাকাবাসীকে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, মুগদা, মাণ্ডা, ডেমরা, বৌদ্ধমন্দির, বাসাবো, মগবাজার, মীরবাগ, মধুবাগ, পূর্ব নয়াটোলা, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, কদমতলী, কুড়িল, নদ্দা, বাড্ডা, মিরপুরসহ অনেক এলাকাতেই গ্যাসের সংকট চরম আকার ধারণ করছে। জানা যায়, সামিট গ্রুপের এলএনজি টার্মিনালটি বন্ধ থাকায় এখন একটি টার্মিনাল দিয়ে মাত্র ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ হচ্ছে গ্রিডে। দেশের অভ্যন্তরীণ কূপ থেকে আরও ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে কমপক্ষে ৩ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটের। ফলে বর্তমানে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে।

এই ঘাটতি সহসা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত গ্যাসের সংকট ভোগাবে নগরের বাসিন্দাদের। গ্যাস সংকটে অনেকে সিলিন্ডার গ্যাসও ব্যবহার করছেন। আবার কেউ কেউ রাত জেগে বা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে রান্না করছেন। তাদের একজন মমতাজ বেগম। প্রতিদিন ভোর হওয়ার আগেই রান্না করতে ঘুম থেকে ওঠেন তিনি। কোনোদিন ঘুম না ভাঙলে সারা দিন আর রান্না করতে পারেন না। কারণ সকাল ৬টার পরই গ্যাস চলে যায় তার বাসায়। পুরান ঢাকার লালবাগের বাসিন্দা তিনি। মমতাজ বলেন, সকালে গ্যাস গেলে সারা দিন পর বিকাল ৪টায় একটু একটু করে আসতে শুরু করে। সবসময়ই এই সমস্যা। আশপাশে কোনো বাসায়ই গ্যাস থাকে না। লালবাগের আরেক বাসিন্দা শাহনাজ বেগম বলেন, মাসে মাসে তো গ্যাস বিল ঠিকই দেই। তারপরও কেন এতো সমস্যা থাকবে। এমন তো হয় না যে, গ্যাস না থাকলে বিল নেবে না। ডেমরার বাসিন্দা আঁখি খানমের বাসায়ও প্রায় দিনই ভোর হলেই গ্যাস চলে যায়। চুলোয় সারা দিন মোমবাতির মতো নিভু নিভু করে আগুন জ্বলে। তাই মাঝেমধ্যে সিলিন্ডারও ব্যবহার করতে হয় তাকে। আঁখি বলেন, রাত ১২টায় পুরোপুরি গ্যাস থাকে। ভোর ৬টা পর্যন্ত স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু এরপর আবার চলে যায়। যে গ্যাস থাকে তা দিয়ে পানি গরম করতেও ২ ঘণ্টা লাগে। সিলিন্ডারের গ্যাস দিয়ে রান্না করতে হয়। মাণ্ডা এলাকার বাসিন্দা ইমন বলেন, সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত গ্যাসের সমস্যা হয়। রাতে রান্না করে তা সারা দিন খেতে হয়। মাসে একটা সিলিন্ডার লাগে আমাদের। গ্যাসের বিল দেয়ার পর আবার টাকা দিয়ে সিলিন্ডার গ্যাসও কিনতে হয়।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, ঢাকায় একটু গ্যাসের সমস্যা বেশি হচ্ছে। সামিট গ্রুপের একটি এলএনজি টার্মিনাল মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুরে রয়েছে। সেটি মেরামত হয়ে এই মাসের মাঝামাঝিতে চলে আসবে। তখন গ্যাস সংকট কমে যাবে। এদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গ্যাসের এই সংকট আগামী ১৫ জুলাইয়ের পর আর থাকবে না। বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুনীল অর্থনীতি বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পার্শ্ব সেশনে আলোচনা শেষে এই তথ্য জানান প্রতিমন্ত্রী।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০