
গুঞ্জন থেকে ব্যাপারটা যখন আদালত পর্যন্ত গড়ায়, তখন অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেন। হয়েছেও ঠিক তাই। ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ চলাকালীন, একাদশের বাইরে থাকা ক্রিকেটার নাসুম আহমেদকে ড্রেসিংরুমে চড় মেরেছেন কোচ চ-িকা হাথুরুসিংহে। এমন অভিযোগ এসেছে কয়েকটি গণমাধ্যমে। যদিও সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটার এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কোনো তরফেই এর কোনো সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি। এই ঘটনার তদন্ত চেয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়েছে। রবিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাহিদুর রহমানের পক্ষে ডাকযোগে ও ই-মেইলে এই লিগ্যাল নোটিসটি পাঠান ব্যারিস্টার আশরাফ রহমান।
পেশাদার ক্রিকেটারদের সংগঠন ক্রিকেটারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সংক্ষেপে কোয়াব। একজন ক্রিকেটার যখন জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে ড্রেসিংরুমে কোচের হাতে শারীরিকভাবে নিগৃহীত হন, তখন খেলোয়াড়দের সংগঠনের পক্ষ থেকেই সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ আসাটা স্বাভাবিক। তবে এ ব্যাপারে কোয়াব এখন পর্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে নীরব। কোয়াব-এর সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘যে কোনো ব্যাপারেই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের কাছ থেকে আসতে হয়। আমরা কোনো ক্রিকেটারের কাছ থেকে এরকম কোনো অভিযোগ পাইনি। তারপরেও আমরা মনে করি সে সামাজিক অবস্থানের কারণে বা ব্যক্তিত্বের পূর্ণতা বা যে কোনো কারণেই হোক অভিযোগটা না-ই করতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারপরও যখন আমরা ব্যাপারটা জানতে পেরেছি তখন আমরা সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের সঙ্গেও কথা বলেছি এবং টিম ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকেও বিষয়টি জানতে চেয়েছি, ঘটনার সত্যতা জানতে চেয়ে। জবাব কী পেয়েছি তা এখন বলা যাবে না। তবে আমরা আমাদের মতো করে খোঁজ নিচ্ছি। যে খেলোয়াড়ের সংশ্লিষ্টতা শোনা যাচ্ছে, তার সঙ্গে আমরা এখনো যোগাযোগ করে উঠতে পারিনি, তবে দলের অন্যান্য ক্রিকেটার কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। চার থেকে পাঁচ জনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, টিম ম্যানেজমেন্টের অনেকের সঙ্গেই কথা হয়েছে তবে এখনই আমরা বিষয়টি প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চেন্নাইতে ম্যাচটি ছিল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তৃতীয় ম্যাচ। সেই ম্যাচে একাদশের বাইরে থাকা নাসুম পানি পানের বিরতিতে মাঠে সতীর্থদের জন্য পানি নিয়ে যেতে দেরি করাতে কোচ তাকে চড় মেরেছেন, এমন কিছু প্রতিবেদন প্রচার হয়েছে গণমাধ্যমগুলোতে। যেসবের পরিপ্রেক্ষিতে ফুঁসে উঠেছেন নাসুমের জেলা সিলেটের সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানাচ্ছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেটাররা কোনো প্রতিবাদ বা আইনি পদক্ষেপ কোনো কিছুই জানাননি, যেটা করেছেন আইনজীবী নাহিদুর রহমান। তার পক্ষে আইনি নোটিস পাঠানো ব্যারিস্টার আশরাফ রহমান গণমাধ্যমকে গতকাল বলেন, ‘বিশ্বকাপ চলাকালীন ১২ অক্টোবর ভারতে অবস্থানকালে আমাদের জাতীয় দলের হেড কোচ হাথুরুসিংহে ক্রিকেটার নাসুমকে চড় মারেন। গণমাধ্যমে কাছ থেকে আমরা এ তথ্য জানতে পারলেও বিসিবিকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।’ এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু চড় মারা একটি ফৌজদারি অপরাধ, তাই আমরা বিসিবির সভাপতিকে একটি লিগ্যাল নোটিস দিয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে যেন এ ঘটনার সত্যতার পরিপ্রেক্ষিতে হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রয়োজনে যেন তাকে বরখাস্ত করা হয়।’
কোয়াব-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট খালেদ মাহমুদ ২০২৩ বিশ্বকাপে ছিলেন টিম ডিরেক্টরের দায়িত্বে। বিসিবির সবশেষ নির্বাচনে খালেদ মাহমুদ পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন, সাবেক ক্রিকেটার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ক্যাটাগরি ৩ থেকে, যেখানে ৪৩ ভোটের মধ্যে তিনি পেয়েছিলেন ৩৭ ভোট। দেবব্রত মনে করেন, এ ব্যাপারে মাহমুদের ভূমিকা অনেক বেশি, ‘তার এখানে অনেক বড় ভূমিকা। উনি সাবেক ক্রিকেটারদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বিসিবি পরিচালক হয়েছেন। উনি যে ক্যাটাগরিতে নির্বাচন করেছেন, সেখানে ১৬ জন ভোটার হচ্ছেন সাবেক খেলোয়াড়, তাদের ভোটেই তো তিনি নির্বাচিত। কাজেই এই ব্যাপারটা ঘটেছে কি ঘটেনি এ ব্যাপারে উনার তো একটা অবস্থান থাকা উচিত।’ কোয়াবের সভাপতি ও সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। সম্প্রতি মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লিগের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়াতে এই আসনে টানা দুই মেয়াদে সাংসদ থাকা দুর্জয় খানিকটা জনবিচ্ছিন্নতাই বজায় রাখছেন, তাই তার সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেননি কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক।
বিশ্বকাপ ব্যর্থতা খতিয়ে দেখতে একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিসিবি। সেই কমিটির সদস্য করা হয়েছে আরেক সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানকে। সংবাদ মাধ্যমে আকরাম জানিয়েছেন, ‘এটা সত্যি কি মিথ্যা আমি জানি না। যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে ক্রিকেটের জন্য, ক্রিকেটারের জন্য, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য খুবই ঝামেলাপূর্ণ জিনিস হবে।’