
রোজা আল্লাহ তাআলার পছন্দের আমল। রোজাদারের যেকোনো নেক আমলের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়। রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধও আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক সুগন্ধিময়। পরকালে রোজাদারকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হবে। জান্নাতে তাদের জন্য থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। জান্নাতে রোজাদারের পুরস্কার ও সম্মান নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো।
১. স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক পুরস্কার
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যই—রোজা ছাড়া। তা আমার জন্য, আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব…।’ (সহিহ বুখারি: ৫৯২৭)
২. বিশেষ দরজা স্থাপন
আল্লাহ জান্নাতে রোজাদারের জন্য বিশেষ দরজা স্থাপন করবেন, যা দিয়ে কেবল রোজাদাররাই প্রবেশ করবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, জান্নাতের রাইয়ান নামের একটি দরজা আছে। এই দরজা দিয়ে কেয়ামতের দিন রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। ঘোষণা দেওয়া হবে, রোজা পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে, যাতে এই দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৯৬)
৩. রোজাদারের সম্মানে দরজা খুলে রাখা
রমজানে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যখন রমজান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। (সুনানে নাসায়ি: ২১০২)
৪. বিশেষ প্রাসাদ
আল্লাহ রোজাদারের জন্য জান্নাতে বিশেষ প্রাসাদ দান করবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, জান্নাতের প্রাসাদগুলো এমন হবে যে এর ভেতর থেকে বাইরের সব কিছু দেখা যাবে এবং বাইরে থেকে ভেতরের সব কিছু দেখা যাবে। এক বেদুইন উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! এসব প্রাসাদ কাদের জন্য? তিনি বললেন, যারা উত্তম ও সুমিষ্ট ভাষায় বলে, ক্ষুধার্তকে খাবার দেয়, প্রায়ই রোজা রাখে এবং লোকেরা রাতে ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় জাগ্রত থেকে আল্লাহ তাআলার জন্য নামাজ আদায় করে তাদের জন্য। (সুনানে তিরমিজি: ২৫২৭)
৫. তৃষ্ণা থেকে চিরমুক্তি
আল্লাহ তাআলা জান্নাতে রোজাদারদের তৃষ্ণা থেকে চিরমুক্তি দান করবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, নিশ্চয়ই জান্নাতে একটি দরজা আছে, যাকে রাইয়ান বলা হয়। কেয়ামতের দিন বলা হবে কোথায় রোজা পালনকারীরা? তোমরা কেন রাইয়ানের দিকে আসছ না? যে ব্যক্তি সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। (সুনানে নাসায়ি: ২২৩৭)
৬. বছরজুড়ে জান্নাতকে সাজানো হয়
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজানের চাঁদ ওঠার পর একদিন নবীজি (স.) বলেন, বান্দা যদি রমজানের মর্যাদা সম্পর্কে জানত তবে সে কামনা করত যেন পুরো বছরই রমজান হয়। তখন খুজাআ গোত্রের এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাদের বর্ণনা করুন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রমজানের জন্য জান্নাতকে বছরের প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সুসজ্জিত করা হয়। রমজানের প্রথম দিন আরশের নিচ থেকে বাতাস প্রবাহিত হয়। ফলে জান্নাতের পাতা ঝরে যায়।
জান্নাতের হুররা তা দেখে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন : হে আল্লাহ! এই মাসে আপনি আমাদের এমন স্বামী দান করুন, যাদের দেখে আমাদের চোখ শীতল হয় এবং আমাদের দেখে তাদের চোখ শীতল হয়। আল্লাহ তাদের দোয়ার উত্তরে বলেন, আমার যে বান্দা রমজানের একদিন রোজা রাখে সে জান্নাতের হুরদের স্ত্রী হিসেবে লাভ করবে। (সহিহ ইবনে খুজাইম: ১৮৮৬)
এছাড়াও অনেক প্রতিদান থাকতে পারে রোজাদারের। কারণ জান্নাত হলো অদৃশ্য জগত। ওই জগতের কথা আল্লাহ তাআলা মানুষকে অল্পই অবগত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউই জানে না তাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ।’ (সুরা সাজদা: ১৭) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি, কোনো মানুষের কল্পনায়ও আসেনি।’ (সহিহ বুখারি: ৭৪৯৮)
পুরস্কার লাভের প্রধান দুই শর্ত
১. নিষ্ঠার সঙ্গে রোজা রাখা
এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে কদরের রাতে নামাজ পড়ে (ইবাদত করে) তার পূর্ববর্তী সময়ের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। (সহিহ বুখারি: ১৯০১)
২. রোজার দাবি পূরণ
আল্লাহভীতি অর্জনকরত পাপ পরিহার করা রোজার প্রধান দাবি। যারা রোজার দাবি পূরণ করে না তাদের ব্যাপারে নবীজি (স.) বলেছেন, কত রোজাদার আছে যাদের রোজার বিনিময়ে ক্ষুধা ছাড়া আর কিছুই জোটে না। কত নামাজ আদায়কারী আছে যাদের রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছুই জোটে না। (ইবনে মাজাহ: ১৬৯০)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নিষ্ঠার সঙ্গে রমজানের রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। রোজার দাবি পুরণের তাওফিক দান করুন। সর্বোপরি জান্নাতের বিশেষ পুরস্কার লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।