বৃহস্পতিবার, ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘জাহাজ জিম্মি করে সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে’

‘আমাদের জাহাজে অ্যাটাক হইছে। জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের সবাইকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। আমাদেরকে মারধর করেনি। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত ভালো আছি, দোয়া কইরো।’

আরব সাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম সাইদুজ্জামান গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সবশেষ স্ত্রী মেহরিমা সাফরিন জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে এ কথা বলেন।

আজ বুধবার সকাল ৮টার দিকে একটি ভয়েস রেকর্ড বার্তা আসে মেহরিমার মুঠোফোনে। সেই বার্তায় একজনের কণ্ঠ শোনা যায়। তিনি জানান, ‘স্যার ভালো আছেন। সেহরি করে স্যার এখন ঘুমাচ্ছেন। কোনো মেসেজ থাকলে এই নম্বরে এসএমএস পাঠাবেন।’

স্বামীকে নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকায় মেহরিমা সাফরিন বলেন, ‘জাহাজের কাজ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় গভীর সমুদ্রে গেলে ১৫-২০ দিন ধরে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ থাকে না। তখন চিন্তা হতো। নেটওয়ার্কের মধ্যে আসলেই তার সঙ্গে আবার যোগাযোগ হতো। কিন্তু এবারের বিষয়টি অনেক উদ্বেগের। তারা জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। খবরে দেখতেছি, মুক্তিপণ না পেলে তাদেরকে নাকি একে একে মেরে ফেলবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ অবস্থায় আমি চরম উৎকণ্ঠায় সময় অতিবাহিত করছি। এক বছরের মেয়ে ও অসুস্থ শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে সাহায্যের জন্য কোথাও যেতে পারছি না। সরকার ও জাহাজ কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আকুতি, যেভাবেই হোক আমার স্বামীকে জলদস্যুদের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করুন।’

আজ দুপুরে নওগাঁ শহরের আরজি এলাকায় প্রকৌশলী সাইদুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী ছাড়াও তার বাবা সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল কাইয়ুম ও মা কহিনুর বেগমের সঙ্গে কথা হয়।

এ এস এম সাইদুজ্জামানের বাবা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আমার ছেলের নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোন করে জানায়, তাদের জাহাজে জলদস্যুরা অ্যাটাক করেছে। জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপর গতকাল রাতে ও আজ সকালে অন্য নম্বর থেকে ভয়েস এসএমএস পাঠিয়েছে। ভয়েস এসএমএসে জানিয়েছে, সে ভালো আছে। দস্যুরা কোনো মারধর করেনি। একটি ঘরে তাদের সবাইকে আটকে রাখা হয়েছে। জাহাজে খাবার পানির সংকট থাকায় তাদেরকে খুব কম পরিমাণে পানি খেতে দেওয়া হচ্ছে।’

আব্দুল কাইয়ুম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জাহাজ কোম্পানির গাফিলতির কারণেই জাহাজটিতে জলদস্যুদের আক্রমণ হয়েছে। কোটি কোটি টাকার মালামাল বহন করে অথচ সেই জাহাজে কোনো কোস্টগার্ড নিয়োগ দেওয়া নেই। কোস্টগার্ড থাকলে জলদুস্যরা এত সহজে আক্রমণ করতে পারত না। এর আগেও ওই কোম্পানির জাহাজে জলদস্যুতের আক্রমণ হইছে।’

সাইদুজ্জামান ২০ বছর ধরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেশি বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানির জাহাজে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন জাহাজে কাজ করছে। এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজ এস আর শিপিং লিমিটেড কোম্পানির একটি জাহাজ।

মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে গতকাল বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৮ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

All Rights Reserved ©2024