বুধবার, ২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালাকানুন বাতিলে সাংবাদিক নেতাদের হুঁশিয়ারি

সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিল, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ সাংবাদিক হত্যার বিচার, সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের নামে বানোয়াট নিউজ পরিবেশনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। সমাবেশে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যাচারের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

 

শনিবার (৩১ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব দাবি জানান। সমাবেশে রুহুল আমিন গাজী বলেন, ফ্যাসিবাদ পতনের পর কোনো দাবি-দাওয়ার জন্য রাজপথে নামতে হবে, এটা আমাদের প্রত্যাশিত ছিল না। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে আমাদের রাজপথে নামতে হচ্ছে। সাগর-রুনির হত্যার বিচার চাইতে হবে কেন? এটা নিয়ে এত টালবাহানা কেন? কেন আপনারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেন না। কেন কোনো পুলিশের ইনকোয়ারি করেন নাই? তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। অবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।

 

সমাবেশে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বিএফইউজের সভাপতি বলেন, ষড়যন্ত্র করে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে পারবেন না। ছাত্রজনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে, সে বাংলাদেশকে কলুষিত করার ক্ষমতা আপনার নেই। সুতরাং, সব ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসুন। সোজা পথে চলেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে নিয়ে চলতে চাই। যদি সোজা পথে না চলেন, তাহলে দায়-দায়িত্ব আপনাদেরকে বহন করতে হবে, আমরা করব না।

 

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের চরিত্র হনন করে ভুয়া বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এ কেমন সাংবাদিকতা? অপসাংবাদিকতা সাংবাদিক সমাজ সহ্য করবে না। মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করার জন্য, সাংবাদিকদের চরিত্র হনন গণমাধ্যমের কাজ নয়। একটি পত্রিকার সম্পাদক আমাকে বললেন গণভবনে আমি দাওয়াত পেলাম না কেন? আমি এখন থেকে পত্রিকায় আপনার বিরুদ্ধে লিখব। এদের কিছুতেই ছাড় দেওয়া যাবে না।

 

কবি আবদুল শিকদার বলেন, ১২ বছরেও সাগর-রুনি হত্যার বিচার না হওয়া দু:খজনক। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। গত ১৫ বছরে ৬৪জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি খুনের শিকার সাংবাদিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান। সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে সাংবাদিক নেতারা লড়াই করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হচ্ছে, মিথ্যাচার করা হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে।

 

সমাবেশে বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যার ১২ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কোনো বিচার পাইনি। যেহেতু ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে, তাই বর্তমান সরকারকে বলতে চাই— অবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। আমরা যেমন সাংবাদিক সুরক্ষা আইন চাই, ঠিক একইভাবে আর কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে গিয়ে যেন কোনো সাংবাদিক আহত না হয় সেটাও চাই।

 

সভাপতির বক্তব্যে মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন সে সব সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কিছু মিডিয়া মিথ্যাচার করছে। তাদের চরিত্র হনন করছে। এটা সহ্য করা হবে। যারা এসব অপকর্মে জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে তিন সদস্যের তদন্ত করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংবাদপত্রকে ব্যবহার যাচ্ছেতাই করবেন এটা হতে পারে না।

 

সমাবেশে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রধান প্রতিবেদক মোরসালিন নোমানি বলেন, আমি তিনটি বিষয়ে কথা বলতে চাই। প্রথমটি হচ্ছে, সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের ১২ বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সময় বলা হয়েছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের ধরা হবে। কিন্তু এত দনেও তা ধরা হয়নি। আমার দাবি হচ্ছে, সাগর-রুনির হত্যার সময় তৎকালীন যনি পুলিশ প্রধান ছিলেন, তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, স্বৈরাচার সরকারের পতনের সময় যে চার জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। আর তৃতীয়টি হচ্ছে, ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতার সময়ে যেসব সাংবাদিক ‘তেল’ দেওয়ার কাজ করেছিল, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। যাতে করে আর তারা কোনো সংবাদ সম্মেলন না করতে পারে।

 

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে নোংরামি থেকে সংশ্লিষ্টদের সরে আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের নেতাদের চরিত্র হনন করবেন এসব সহ্য করা হবে না।

 

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএফইউজে সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক, সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবি আবদুল হাই শিকদার, দ্য নিউ নেশনের সাবেক এডিটর মোস্তফা কামাল মজুমদার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ, সাঈদ খান বক্তব্য রাখেন।

 

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০