কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ষষ্ঠ ওভারের মধ্যেই দুই ওপেনার তেম্বা বাভুমা ও কুইন্টন ডি কককে হারায় তারা। এরপর দলীয় ২৪ রানের মধ্যে পতন ঘটে চতুর্থ উইকেটের। সেই ট্রমা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি প্রোটিয়ারা। বিপর্যয়ের মধ্যে ডেভিড মিলার লড়াকু এক সেঞ্চুরি করলেও দল পায় ২১২ রানের পুঁজি।
ছোট্ট পুঁজি নিয়েও অনবদ্য লড়াই করে দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও শেষ হাসি হাসা হলো না কুইন্টন ডি ককদের। প্রোটিয়াদের প্রবল বাধা অতিক্রম করে ১৬ বল বাকি থাকতে ৩ উইকেটের স্নায়ুক্ষয়ী জয় তুলে নেয় প্যাট কামিন্সের দল। আগামী রোববার আহমেদাবাদে ফাইনালে লড়বে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া।
এর আগে প্রোটিয়াদের লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন ডেভিড মিলার। ১১৬ বলে ৮টি বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায় ১০১ রান করে প্যাট কামিন্সের শিকার হন তিনি। তার সেঞ্চুরিটি চলতি বিশ্বকাপের ৩৯তম। পুরুষদের বিশ্বকাপে এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক সেঞ্চুরি হলো। ২০১৫ সালে হয়েছিল ৩৮টি।
প্রথম ওভারের ষষ্ঠ বলে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক বাভুমা। মিচেল স্টার্কের বলে উইকটেকিপার জস ইংলিশকে ক্যাচ দেন তিনি। এরপর অস্ট্রেলিয়ার আগুণে বোলিংয়ের মুখে কোনঠাসা হয়ে পড়েন ডুসেন ও ডি কক। দুজন কোনোভাবেই রান বের করতে পারছিলেন। অজিদের যেমন বোলিং, তেমন শক্ত ফিল্ডিং। এমনই দম বন্ধ হওয়া পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে গিয়ে জীবন দিলেন ডি কক। জস হ্যাজেলউডকে স্ট্রেইটে ছক্কা মারতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন তিনি। অজি দলনায়ক প্যাট কামিন্স লং-অন থেকে অনেকটা পেছনে দৌড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন। ভাঙে ২৮ বলে ৭ রানের জুটি।
এরপর ফন ডার ডুসেনের সঙ্গে উইকেটে যোগ দেন এইডেন মার্করাম। ৩১ বলের মোকাবেলায় মাত্র ১৪ রান বোর্ডে যোগ করতে সমর্থ হন তারা। ১১তম ওভারে দলের রান যখন ২২ তখন স্টার্কের শিকার হন মার্করাম। পয়েন্টে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন ডেভিড ওয়ার্নার।
পরের ওভারে হ্যাজলেউডের বলে স্লিপে স্টিভ স্মিথকে ক্যাচ দেন ডুসেন। স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাটিংয়ে ৩১ বলে ৬ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। ২৪ রানে ৪ উইকেট পতনের পর দলকে বড় লজ্জা থেকে বাঁচানোর ভার পড়ে হাইনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলারের ওপর। দলের দুঃসময়ে দুজন দারুণ ব্যাটিংয়ে ১১৩ বলে ৯৫ রানের জুটি গড়েন। যদিও ৩১তম ওভারে অকেশনাল স্পিনার ট্রাভিস হেডে জোড়া আঘাতে প্রোটিয়াদের স্কোর হয়ে যায় ১১৯/৬। চতুর্থ বলে ক্লাসেনকে বোল্ড করেন হেড, পরের বলে তিনি লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন নতুন ব্যাটার মার্কো ইয়ানসেনকে।
এরপর জেরাল্ড কোয়েৎজিকে নিয়ে নতুন করে লড়াই শুরু হয় মিলারের। দুজন মিলে বোর্ডে ৭৬ বলে ৫৩ রান যোগ করেন। কামিন্সের শর্ট বল কোয়েৎজির গ্লাভস ছুঁয়ে উইকেটকিপার জস ইংলিশের হাতে চলে যায় ধারণা করে আম্পায়ার আউট দিলেও পরে ভিডিওতে দেখা যায়, বল গ্লাভস নয়, কনুইতে হালকা লেগেছিল।
সাত উইকেট পতনের পর কেশব মহারাজকে নিয়ে ১৯ ও কাগিসো রাবাদাকে নিয়ে ১২ রান যোগ করেন মিলার। এ পথে তুলে নেন সেঞ্চুরি। ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে কামিন্সকে ডিপ মিডউইকেট অঞ্চল দিয়ে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। এটা তার ষষ্ঠ ওয়ানডে সেঞ্চুরি ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় সেঞ্চুরি। যদিও এটাই তার ব্যাট থেকে আসা শেষ রান। পরের বলটি ওয়াইড দেন কামিন্স। তারপরের বলটিকে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন হেডের হাতে (২০৩/৯)।
সাজঘরে ফেরার আগে রেকর্ড গড়েন মিলার। বিশ্বকাপের ৬ কিংবা তার নিচের পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে তিনিই প্রথম সেঞ্চুরি করলেন। আগের সর্বোচ্চ ৮৬ রান করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কলিস কিং (১৯৭৯ বিশ্বকাপ)।
মিলারের বিদায়ের পরও ১৬ বলের খেলা বাকি ছিল। তাবরাইজ শামসি ও রাবাদা মিলে তুলতে পারলেন মাত্র ৯ রান। ৪৯.৪ ওভারে ২১২ রানে অলআউট দক্ষিণ আফ্রিকা।