মঙ্গলবার, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দেড় যুগ ধরে ইসলাম ধর্মের ক্লাস নিচ্ছেন হিন্দু শিক্ষকরা

রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বারুগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৭ জন শিক্ষক রয়েছেন, যারা সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বীর। প্রায় ১৮ বছর ধরে এই বিদ্যালয়ে কোনো মুসলিম শিক্ষক না থাকায় মুসলিম শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। অথচ বিদ্যালয়টিতে একটি পদ শূন্য রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অনেক শিক্ষক বলছেন এটা কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার দৃষ্টান্ত।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দীপ্তি রানী দাস জানান, “এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৬০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে, এর মধ্যে ৩য়-৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ১৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি মুসলিম। বিদ্যালয়ে ৮টি পদের বিপরীতে ৭ জন শিক্ষক রয়েছে। আমরা আন্তরিকভাবে যথাসাধ্য চেষ্টা করি শ্রেণি পাঠদান নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু অনেক বছর কোনো মুসলিম শিক্ষক না থাকায় ইসলাম শিক্ষা বিষয়ক পাঠদান কার্যত সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক টিটন সিকদার বলেন, আমার মেয়ে বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আমার মেয়েকে নিয়মিত ধর্মীয় শিক্ষা দিতে পারছে না স্কুলটি। হিন্দু শিক্ষকরা সেটা কতটা মন দিয়ে পড়াবেন সেটাও প্রশ্ন। আমরা কোনভাবে হিন্দু শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নই, কিন্ত ধর্মীয় ভারসাম্য থাকা উচিত।

শুধু ইসলাম শিক্ষা নয়, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই জানান, ধর্মীয় বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন রোজা, ঈদ, নামাজ সংক্রান্ত পাঠ বা শিক্ষাদান ঠিকভাবে হয় না। একজন শিক্ষার্থী বলেন, “ইসলাম শিক্ষা বই থেকে পড়া হয়, কিন্তু কোনো প্রশ্ন করলে অনেক সময় উত্তর পাওয়া যায় না।”

অভিভাবক ও স্থানীয়দের দাবি, যখন শিক্ষা নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে, তখন ধর্মীয় শিক্ষা থেকে একটি বড় অংশের শিক্ষার্থী বঞ্চিত হওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ সংকট নিরসনে স্থানীয় পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

বালিয়াকান্দি শিক্ষা অফিসের একটি সূত্র জানায়, শুধু বারুগ্রাম বিদ্যালয় নয়, জামালপুর এবং জঙ্গল ইউনিয়নে এধরনের আরও কিছু বিদ্যালয়ে রয়েছে যেখানে শিক্ষক সমন্বয়হীনতা রয়েছে। সেখানে সংশ্লিষ্ট বিষয় ধর্মীয় শিক্ষক নেই।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আপনার মাধ্যমে বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। কোনো বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হলে সেটি সমাধানের দায়িত্ব আমাদের। যেসব বিদ্যালয়ে এমন সমন্বয়হীনতা রয়েছে সেগুলো আমরা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে চিহ্নিত করবো। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানান।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. তবিবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে অবগত নই, আপনার মাধ্যমেই জানলাম। প্রাথমিকে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ হয় না। নীতিমালা অনুযায়ী এ ধরনের বিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানান।

শেয়ার করুনঃ