মঙ্গলবার, ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে নতুন নীতিমালা

বাংলাদেশ পুলিশে তিন হাজার কনস্টেবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। বহুদিন ধরে চলে আসা নিয়োগের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনে এবছর নতুন নীতিমালায় পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। শুক্রবার থেকে অনলাইনে এই আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে, যা চলবে সাতই অক্টোবর পর্যন্ত। পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের যেসব অভিযোগ বিভিন্ন সময় উঠেছে, তা ঠেকাতেও নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে ওই নীতিমালায়।
বাংলাদেশ পুলিশে তিন হাজার কনস্টেবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
এতদিন ধরে বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ প্রক্রিয়া পুলিশ রেগুলেশন ১৯৪৩ অনুযায়ী করা হতো। কিন্তু গত বছর থেকে সেই নিয়মকানুন আধুনিক করার উদ্যোগ নেয়া হয়।

সেখানে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল, উপ-পরিদর্শক (এসআই), সার্জেন্ট ও এএসপি নিয়োগের নীতিমালায় কিছু সংশোধন আনা হয়েছে।

নতুন নীতিমালা প্রসঙ্গে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ”পুলিশের নিয়োগ স্বচ্ছতার বিকল্প নেই। সামনে পুলিশের যেসব নিয়োগ হবে, সেগুলো অতীতের তুলনায় কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। পুলিশে সদস্যদের নিয়োগগুলো পুলিশ সদর দপ্তর নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করবে।”

যেমন এতদিন যাবত কনস্টেবল, এসআই ও সার্জেন্ট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর নির্ধারিত তারিখে সবাই সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ লাইনে হাজির হয়ে শারীরিক পরীক্ষা দিতেন। সেখানে উত্তীর্ণ হলে তাদের লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হতো।

কিন্তু নতুন নীতিমালা অনুসারে, তাদের আগে উচ্চতা, শারীরিক বর্ণনা ও যোগ্যতার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। সেই সময় শুধুমাত্র টেলিটক ব্যবহার করে ৩০ টাকা ফি জমা দিতে হবে। সেখানে যাচাই বাছাই শেষে যারা নিয়োগের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন, তাদেরকেই শুধুমাত্র শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষার জন্য মোবাইল নম্বরে এসএমএস করা হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলছেন, ”আগে হাতে লিখিত ও স্থানীয়ভাবে যাচাই বাছাই হওয়ার কারণে হয়তো অনিয়মের সুযোগ থাকতো। কিন্তু এখন অনলাইনে প্রাথমিক যাচাই হয়ে যাওয়ায় কেউ সেখানে পছন্দের প্রার্থী আনার সুযোগ পাবেন না। আবার পুরো প্রক্রিয়াটি সদর দপ্তর থেকে মনিটরিং করায় অনিয়মের সুযোগ কম হবে।” বিশেষ করে বাছাই করার পর প্রশিক্ষণের আগে আরেকবার সদর দপ্তরের টিম যাচাই করবে। ফলে সেখানেও কোন অযোগ্য প্রার্থী বা অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকবে। ফলে অনিয়ম এবং দুর্নীতির সুযোগগুলো কমে যাবে,” তিনি বলছেন।
পুলিশের নিয়োগে স্বচ্ছতা আনার বিষয়টি নতুন নীতিমালায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে দুই বছরের জন্য শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করতে হবে কনস্টেবল বা এসআই/সার্জেন্টদের। দুই বছর সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পর তাদের চাকুরী স্থায়ী হবে।বাংলাদেশ পুলিশের মহা-পরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, নতুন নিয়মের ফলে বাংলাদেশের পুলিশে সাব ইন্সপেক্টর, সার্জেন্ট ও কনস্টেবল নিয়োগে মেধা ও শারীরিক সক্ষমতায় যোগ্যতর লোক আসবেন।

তবে পুলিশের চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় অংকের আর্থিক লেনদেন ও অনিয়মের অভিযোগ বেশ পুরনো। বাংলাদেশে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যায়ে নিয়োগে লাখ লাখ টাকার লেনদেন হয়। সেই অর্থ তুলে আনার জন্য পরবর্তীতে পুলিশের সদস্যরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

তবে নিয়োগ ঘোষণার শুরুতেই সবাইকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন প্রকার আর্থিক লেনদেনে জড়িত হলে গ্রেফতার ও নিয়োগ বাতিল করা হবে।

আবেদনের সময় ৩০ টাকা আর লিখিত পরীক্ষার ১০০ টাকা ফি ছাড়া এই চাকরিতে আর কোন টাকা দিতে হবে না বলেও জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া তদারকি করতে পুলিশ সদর দপ্তরের টিম মাঠে কাজ করবে বলেও জানানো হয়েছে। পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহা-পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলছেন, ”নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের প্রশ্ন তো শুধু পুলিশের ক্ষেত্রেই ওঠে না, আমরা তো সমস্ত চাকরিতেই দেখি নিয়োগ নিয়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তবে অভিযোগ থাকলে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

All Rights Reserved ©2024