এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান মঞ্জু বলেছেন, নির্বাচন দিতে সবকিছুর ওপর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব দরকার। রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
এবি পার্টির এ নেতা বলেন, নির্বাচন দিতে সবকিছুর ওপর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব দরকার। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবার সমঝোতা দরকার। এবং এর ভিত্তিতে সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা দরকার।
তিনি বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, সবার সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে আগামী বছরের ৫ ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনটা করা যায় কি না- সেটা ভেবে দেখতে।
মঞ্জু বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর ছাত্রদের ঐক্য ধরে রাখা যায়নি। উপদেষ্টা পরিষদের কেউ কেউ এর জন্য দায়ী।
নির্বাচন ডিসেম্বরে করতে কি সমস্যা? অনিবার্য কারণে জুন পর্যন্ত সময় লাগলে অসুবিধা কী? অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির কাছে এর উত্তর ও ব্যাখ্যা চেয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি। নির্বাচন ডিসেম্বর না জুন? এই বিতর্কের সমঝোতাভিত্তিক সমাধানও চেয়েছে দলটি।
ব্রিফিংকালে মজিবুর রহমান মঞ্জু বৈঠকে প্রদত্ত বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বলেন, আমরা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি- আপনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে চান। কারণ বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবি দাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে আপনার স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে তাতে আপনি বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ।
দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম সাক্ষাতে আমরা আপনাকে বলেছিলাম, আপনার এই দায়িত্ব খুবই চ্যালেঞ্জিং এবং এতে ব্যর্থ বা পরাজিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আপনি তাতে সাঁয় দিয়েছিলেন এবং সকলের নিকট সর্বাত্মক সহযোগিতা চেয়েছিলেন। আমরা বিনয়ের সাথে জানিয়েছিলাম, বাস্তব কারণে আপনার সাথে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্কের অবনতি ঘটার সম্ভাবনা আছে, এক্ষেত্রে একটি সমন্বয় টিম গঠন করা দরকার যারা শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা-সমন্বয় ইত্যাদি গুরু দায়িত্ব পালন করবেন। আপনার সহযোগী উপদেষ্টাদের কারও কারও পরামর্শ বা অনীহার কারণে আপনি সেটা করেননি। পরবর্তীতে বহু পরে আপনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নামে যে টিম গঠন করেছেন সেটা মূলত. সংস্কার বিষয়ক কাজে নিজেদেরকে নিবদ্ধ করেছে, কোনো ধরনের সমন্বয়ের দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয়নি। ফলে আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সরকারের ব্যাপক সন্দেহ, সংশয়, গ্যাপ ও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। নবগঠিত দল এনসিপির সাথেও কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারের সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি গণঅভ্যুত্থানের কিং মেকার ছাত্রসমাজ তথা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, ছাত্রী সমাজ, কলেজ, স্কুল ও জেন-জিদের মধ্যে যে বিভাজন রেখা পরিলক্ষিত হয়েছে সে ব্যাপারে সরকার নির্বিকার থেকেছে। এটা ক্রমশ সরকারের সমর্থনের ভিত্তিকে দুর্বল করে তুলেছে। মূলত: নির্বাচন ডিসেম্বরে করতে কি সমস্যা? অনিবার্য কারণে জুন পর্যন্ত সময় লাগলেই বা অসুবিধা কী? অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির কাছে জনগণ এর ব্যখ্যা জানতে চায়! আশা করি উভয় পক্ষ এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরবেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা জানি, সরকারের কর্তৃত্ব ও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া রাষ্ট্র শাসন করা অসম্ভব একটি ব্যাপার। মনে হচ্ছে সিভিল ও সামরিক প্রশাসনের উপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এখনও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যা গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে আরও স্পষ্ট হয়েছে। আমরা মনে করি, গণঅভ্যুত্থানের পক্ষ শক্তিগুলোর পরস্পর স্বার্থ কেন্দ্রিক অনৈক্য, মতাদর্শগত বিরোধ এবং পারস্পরিক বাকবিতণ্ডা এবং ব্লেমগেমও সরকারের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়েছে। কিন্তু এসব বিষয় সমাধানে সরকারের বিশেষ কোনো চেষ্টা বা আন্তরিক উদ্যোগ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টরাও এসকল বিষয়কে আরও জটিল করে তুলেছেন। এমতাবস্থায় শুধু আহ্বান, আনুষ্ঠানিক বৈঠক বা আশা পোষণ জাতীয় বিবৃতি দিয়ে এ সংকটের সমাধান হবেনা। কাঁদা ছোড়াছুড়ি ও পরস্পর দোষারোপ পরিস্থিতিকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলবে। আপনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালে কিম্বা পুরো উপদেষ্টা পরিষদ পদত্যাগ করলেও কোন লাভ হবে না বরং দেশ এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। আমরা মনে করি বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সঠিক উপলব্ধি, ছাড় দেয়ার মনোভাব প্রদর্শন, ইগো পরিত্যাগ ও সমঝোতামূলক পদক্ষেপই উত্তম সমাধান। সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সরকারের পক্ষ থেকে যেসকল গ্যাপ ও ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে তা সংশোধনে উদ্যোগ নেয়া দরকার। উপদেষ্টা পরিষদ পুণর্গঠন, সংশোধন, পরিমার্জনসহ জাতীয় ঐক্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে কঠোর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সকলের ঐকমত্যে গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণা পত্র ও জাতীয় সনদ তৈরি করুন। নির্বাচন, সংস্কার ও ফ্যাসিবাদী-খুনিদের বিচারের একটি রোড ম্যাপ ঘোষণা করুন।
এর আগে, গতকাল শনিবার রাতে তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। ভিন্ন ভিন্ন এই বৈঠকে প্রথমে অংশ নেয় বিএনপি। এরপর জামায়াতে ইসলামী ও তরুণদের রাজনৈতিক দল এনসিপি।