বুধবার, ২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বন্যা আতঙ্কে তিস্তা পাড়ের মানুষ

উজানের পাহাড়ি ঢলে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি হু-হু করে বাড়ছে। তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। এতে করে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের কিছু ফসল জমি ও ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। বন্যার শঙ্কায় নদী পাড়ের মানুষের ঈদের আনন্দ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এদিকে বন্যা মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে উজানে মাঝারি, ভারি ও অতিভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উজানের পানির চাপের কারণে তিস্তা নদীর ডালিয়া ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।

শনিবার (১৫ জুন) সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার এবং ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গঙ্গাচড়া উপজেলার শংকরদহ গ্রামের পাট, ধান, ভুট্টা ও বাদামের খেত প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় ভেসে যাওয়ার ভয়ে অনেকে অপরিণত পাট কেটে ঘরে তুলছেন। চরাঞ্চলে যেসব পুকুরে মাছ ছিল, বন্যার শঙ্কায় সেখানে জাল ও বাঁশের বাতা দিয়ে পুকুর ঘিরে রাখতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে চরের মানুষদের। বন্যা মোকাবেলায় অনেকে বাঁধের ওপর অস্থায়ী ঘর তুলে রেখেছেন।

গ্রামের বাঁধে আশ্রিত আয়শা বেগম বলেন, ‘আইজ সকালে বাড়ি পানি উঠছিল। এ্যালা একনা পানি নামি গেইল। নদীর যে স্রোত, মনে হইতোছে ঈদোত মনে হয় ঘরবাড়ি পানিত ডুবি যাইবে।’

একই এলাকার নগেন্দ্র নাথ বলেন, ‘এইবার বৃষ্টি নাই হইতে তিস্তা নদীত পানি বাড়ছে। কলা গাছের ভূরা রেডি করি থুইছো। ভূরাত করি বাড়ি থ্যাকি আস্তাত যাওয়া আসা করা নাগবে। এটে কোনা একটা বান্ধ দিলে প্রতিবার হামাক পানিত ভাসা নাগিল না হয়। কিন্তু কই কায়ো তো সেই কতা শোনে না।’

গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। তবে এখন পর্যন্ত বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। নদীর তীরবর্তী এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। কিছু কিছু বাড়িতে পানি উঠেছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি হলে আমরা দ্রুতই দুর্গতদের সার্বিক সহযোগিতা করব।’

কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিদুল হক বলেন, তিস্তায় এখন পর্যন্ত বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি। এরপরও সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের খোঁজ-খবর রাখতে বলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে, আবার কমছে। তবে এখন পর্যন্ত বিপদসীমার নিচে পানি অবস্থান করছে। যদি বন্যা পরিস্থিতি কিংবা ভাঙ্গন দেখা দেয়, তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। বিশেষ করে গংগাচড়া, কাউনিয়া এবং পীরগাছা উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় খোঁজ রাখা হচ্ছে। যাতে পানিবন্দি এলাকায় তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০